আমরা দেখেছি স্বৈরশাসকরা জনগণের ঐক্যের সামনে দাঁড়াতে পারে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন। কারণ ঐক্যবদ্ধ হলে দাবিয়ে রাখা যায় না। এ জন্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। জনগণকে সাথে নিয়ে সেই ঐক্যের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে গণফোরাম আয়োজিত ‘একুশ মানে অধিকার আদায়ের অঙ্গীকার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে যাচ্ছে এই রাষ্ট্রকে কিন্তু আমরা ধরে রেখেছি। এটা কিন্তু কম অর্জন নয়।
পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতিকে কাজে লাগিয়ে। সে রাষ্ট্রগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও অনেকবার হয়েছে। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি, জনগণ সফল হয়েছে। জনগণ হচ্ছে শক্তি, ক্ষমতার উৎস। মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, কায়দা করে, সত্যিকার অর্থে মানুষের রায়কে তাদের পক্ষে নেয়া যায় না। গত ৪৮ বছরেও সেটা কেউ পারেনি। এটাই আমাদের ৪৮ বছরের বড় অর্জন। জোর করে ক্ষমতা দখল করা যায়, কিন্তু জনগণকে দখল করা যায় না।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নিয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা সফল হয়নি। সামনে জাতীয় মুক্তির জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে নিরাশ হওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এই রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করা, জনগণের ঐক্য, মৌলিক অধিকারকে বাস্তবে রুপ দেয়া। জনগণ যেন তাদের অধিকার-প্রাপ্যটা আদায় করতে পারে, সেজন্য আমাদের ঐক্যকে সুসংহত করতে হবে।
দেশের বাইরে টাকা পাচারকারীদের ক্ষমতার উৎস জানতে চেয়ে গণফোরাম সভাপতি বলেন, দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হচ্ছে। এ পাচার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ডাকাতি এবং পাচারকারীরা রাষ্ট্রীয় ডাকাত। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব টাকা বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, অস্ত্র দিয়ে, বিভেদ সৃষ্টি করে, সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নিয়ে আমাদের বঞ্চিত করে দেশের পুঁজি বা অর্থপাচার করবে। কার বাবার সম্পত্তি তোমরা পাচার করেছ? তাদের ধরে না কেন? বলা হয় না কেন- কোথায় থেকে তোমরা এ ক্ষমতাটা পেলে?’
এসময় গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ বলেন, দেশের অনেক বুদ্ধিজীবীও ভাষা আন্দোলনকে শুধুমাত্র ভাষা আন্দোলনের লড়াই হিসেবে বিবেচনা করেন। বাস্তবিক অর্থে এটা অনেক বড়। তৎকালীন বিরাজমান অবস্থার প্রেক্ষিতে অন্তর্নিহিত শক্তি অর্জন করেছিল ভাষার আন্দোলন, যা স্বাধীনতার সংগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে গেছে। ভাষা সবসময় অসাম্প্রদায়িক। কারণ সবার মুখের ভাষা অসাম্প্রদায়িক। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের ভাষাও অসাম্প্রদায়িক। সার্বিক মুক্তি, অধিকারের নাম একুশ। তিনি বলেন, আজকে ভয় ও ভেলকিবাজির মাধ্যমে নির্বাচনকে ক্ষমতাসীনরা দখল করেছে। আজকে তাই বার্তা হচ্ছে, জনগণের অধিকার আদায় ও সত্যিকারের মালিকানার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, সেই প্রত্যয় নিয়ে আমাদের এগিয়ে চলতে হবে। সভায় দলের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।