বিএনপির প্রার্থীরা ঢাকার দুই সিটির ভোটে ফল বিপর্যয়ে দলের ঢাকার নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটের দিন ঢাকার নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে তাদের কাঠগড়ায় তুলেছেন। সদ্য সমাপ্ত এই নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগের থাকলেও দলের নেতাকর্মীদের সরকার ও প্রশাসনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তবে এর সঙ্গে প্রার্থীরা ভোটের দিন নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা না থাকাকেও দুষছেন।

বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীদের দিকে। তারা বলছেন, প্রচার-প্রচারণার সময় নেতাকর্মীরা পাশে থাকলেও নির্বাচনের দিন কাউকে তারা পাশে পাননি। কেউ আবার বলছেন, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও ঢাকার নেতাদের একপক্ষের ইন্ধনে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করায় ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে।

গত রবিবার ঢাকা দক্ষিণের নির্বাচন পরবর্তী মতবিনিময় সভায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বক্তব্যে এসব অভিযোগ করা হয়। এ সময় বৈঠকে থাকা দলের শীর্ষ নেতারা সাংগঠনিক ব্যর্থতার কথা অকপটে স্বীকারও করেছেন। আর বাকি অভিযোগের বিষয়গুলো নোট নিয়েছেন। যা নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

কামরাঙ্গীরচরের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ নাঈম অভিযোগ করে বৈঠকে বলেন, ‘আমার ওয়ার্ড সভাপতি সহযোগিতা করেননি। উল্টো বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়েছেন। তাই আওয়ামী লীগ নয়, আমাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে দলের অন্য প্রার্থীকে। আর আওয়ামী লীগ-পুলিশের অসহযোগিতা তো আছেই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অনেক বিষয় উঠে এসেছে। সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ যেমন ছিল, আবার দলীয় কিছু বিষয় ছিলো যা প্রার্থীরা বলেছেন। নোট নেয়া হয়েছে। পরবর্তী পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

পল্টন এলাকার কমিশনার প্রার্থী আব্বাস উদ্দিন তার নির্বাচনী অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগরের একটি অংশের নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীকে মাঠে নামিয়েছে। কার ইন্ধনে এমনটা হলো? অভিযোগ জানালাম আপনারা ব্যবস্থা নেবেন।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রার্থীদের প্রায় সবারই বক্তব্য ছিল সিটি নির্বাচনে সরকারের প্রশাসন প্রভাব বিস্তার করেছে। এ ছাড়া ইভিএমে ভোট কারচুপি হয়েছে, সরকারদলীয় লোকজন কেন্দ্রে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবস্থান করেছেন কিন্তু সাংগঠনিক ব্যর্থতার জন্য বিএনপি তা প্রতিরোধ করতে পারেনি।

মতবিনিমিয় সভায় সাংগঠনিক ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি জানি, ঢাকার নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সামনে আমাদের কাউন্সিলর প্রার্থীরা দাঁড়াতে পারেননি। কিন্তু আমাদের সংগঠনের অবস্থা এতই দুর্বল যে কোথাও কিছু করতে পারলাম না আমরা। আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।’

এদিকে ওই সভায় নির্বাচনে ঢাকার নেতাকর্মীদের সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন ভোট দেয়ার পরে আমি নিজেই বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়েছি। কিছু কিছু ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছেন। আবার কোথাও কোথাও নির্বাচনের দিন কাউন্সিলর প্রার্থী ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেউ জীবন বাজি রাখবে আর কেউ ঘুমিয়ে থাকবে তা হয় না।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031