কৃষকরাও অর্গানিকভাবে সবজি চাষ করতে চান না। বর্তমান সময়ে রাসায়নিকমুক্ত শাক-সবজি খাওয়ার কথা শুধু ভাবাই যায়, তা পাওয়া যায় না। তবে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ফেনীর একটি গ্রামের কিষান-কিষানিরা। তারা মানুষকে বিষমুক্ত শাকসবজি খাওয়ানোর সংকল্পে একজোট হয়েছেন। শীত মৌসুম থেকে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব, রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক বালাইনাশক ছাড়াই নিরাপদ সবজি আবাদ করছেন তারা। মানুষকে বিষমুক্ত শাকসবজি খাওয়াতে পারছেন এই ভেবেই তারা আনন্দিত। তবে, এসব সবজির দাম অন্য সবজির চাইতে কিছুটা বেশি হবে জানান কৃষকরা।
এই কৃষকেরা সবাই ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের বাসিন্দা। এই প্রচেষ্টার কারণে গ্রামটি এখন ‘নিরাপদ সবজির গ্রাম’ বা ‘অরগানিক কৃষি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। প্রায় ৩০ জন কিষান-কিষানি এবার তাদের জমিতে চাষ করেছেন বিষমুক্ত শাকসবজি।
সরেজমিন দেখা যায়, গ্রামের চারদিক সবুজ সবজির খেতে ভরা। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মারুফের পরামর্শে গ্রামের ৩০ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত নানা রকম সবজি। বর্তমানে জমিতে রয়েছে শিম, টমেটো, ফুলকপি, খিরা, ভুট্টা, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, মূলা, ধনেপাতা, বেগুন ইত্যাদি।
এই কৃষক দলের একজন আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আগে আমরা জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতাম। কীটনাশক স্প্রে করতাম। বিভিন্ন জাতের শাকসবজি আবাদ করেছি। তবে আমরা জানাতাম না, এ সব ফসল বিষাক্ত এবং এসব খেয়ে মানুষেরা নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতেন। আমরা কৃষি বিভাগের কাছ থেকে জানতে পারি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগে জমির ফসল বিষে পরিণত হয় এবং মাটির উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মানুষকে আর বিষ খাওয়াব না। বর্তমানে আমাদের গ্রামের সবাই নিরাপদ সবজি আবাদের সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন।’
জগতপুর গ্রামের কৃষক নেছার উদ্দিন, নুর আলম, আবু তাহের, মোজাম্মেল হক ও বলাই চন্দ্র নাথও বিষমুক্ত সবজি আবাদ করছেন। তা বলেন, ‘কপি, বেগুন, করলা এবং লাল শাক সবজি জাতীয় সবকিছুই আমাদের এখানে আছে। আমরা সব জাতের সবজি চাষ করি। আমরা চাই বিষমুক্ত সবজি। কারণ বিষ প্রয়োগ করলে সবার ক্ষতি। বিষমুক্ত সবজি এবং নিরাপদ খাদ্য আমরা যাতে উৎপাদন করতে পারি, সে চেষ্টা করছি।’
কৃষক নুর আলম বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের মানুষ নিরাপদ সবজি খেতে পারে। সবার যাতে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। বিষমুক্ত সবজির দামও আমরা বেশি পাবো।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান, ‘নিরাপদ কৃষি গ্রাম হচ্ছে একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। প্রকৃতপক্ষে কৃষিকে বিষমুক্ত করতেই এই উদ্যোগ। এতে কৃষকের সাড়া মিলছে প্রচুর।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাফিউল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি উপজেলায় দুটি গ্রামকে নিরাপদ সবজি গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করাসহ একটি গ্রামকে নিরাপদ ফল গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করতে বলা হয়েছে। যার মধ্যে জগতপুর একটি গ্রাম এবং বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করার জন্য মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষক গ্রুপ, উঠান বৈঠকসহ হাতে-কলমে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকেন। তাই কৃষকদের মাঝে কৃষি বিভাগের পক্ষে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন পদ্ধতি কৃষকদের আকৃষ্ট করেছে।’