ইয়াবা ও হেরোইনের বিকল্প মাদক হিসেবে ব্যথানাশক ট্যাবলেট অবাধে বিক্রি হচ্ছে দিনাজপুরে । আর তা সেবন করে শুধু নৈতিক অধঃপতনে নয়, অকালে ঝরে পড়ছে তরুণ ও যুব সমাজ। এ অভিযোগে বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও দোকান সিলগালা করেছে প্রশাসন। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি না করার প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রায় সব দোকানেই মিলছে মাদকের বিকল্প এসব ভয়ঙ্কর নেশাজাতীয় ওষুধ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদক হিসেবে এসব ওষুধের ব্যবহার রোধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরেই ইয়াবা ও হোরোইনের বিকল্প হিসেবে মাদকাসক্তরা টাপেন্টা, সিলটা, পেন্টাডল, লোপেন্টাসহ বিভিন্ন ব্যথানাশক ট্যাবলেট সেবন করছেন। এ অভিযোগে এরই মধ্যে জেলার তিনটি দোকান ছাড়া, বাকি ওষুধের দোকানগুলোকে ব্যথনাশক ট্যাবলেট বিক্রি বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন। একই অভিযোগে বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও দোকান সিলগালা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপরও ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অধিকাংশ দোকানে এসব ট্যাবলেট গোপনে বিক্রি করছেন এক শ্রেণির অসৎ ওষুধ ব্যবসায়ী।
জেলা শহরের চারুবাবুর মোড়, বালুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড মোড়, হাসপাতাল মোড়, টিএনটি রোড, গোলকুঠি রোড, মেডিকেল মোড, সুইহারী, পুলহাটসহ শহরের বেশকিছু স্থান এবং জেলার ১৩টি উপজেলায় বেশকিছু স্থানে কেনাবেচা চলছে ইয়াবা ও হেরোইনের বিকল্প হিসেবে এসব ট্যাবলেট। প্রতি পিস ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকার ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়।
মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ‘নতুন জীবন’-এর নির্বাহী পরিচালক চিকিৎসক আরাফাত উল্লাহ্ জানান, টাপেন্টা, সিলটা, পেন্টাডল, লোপেন্টাসহ বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ ইয়াবা ও হেরোইনের মতই সেবন করা হচ্ছে। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা ও হেরোইনের চেয়েও তীব্র এবং ভয়ঙ্কর। দাম কম ও সহজলভ্য হওয়ায় এর প্রভাব বাড়ছে। মাদকের উপাদান এভাবে বাড়লে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা তার। তাই এই ট্যাবলেটগুলো বিক্রি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এসব ব্যথানাশক ট্যাবলেট বিক্রি নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রশাসনও উদ্বিগ্ন। দিনাজপুর জেলা ওষুধ প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়ক এসএম সুলতান আরেফিন জানান, নির্দিষ্ট দোকান ছাড়া এসব ব্যাথানাশক ট্যাবলেট বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ অভিযোগে বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও দোকান সিলগালা করেছে প্রশাসন।
দিনাজপুরের নবাগত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন যোগদানের পর মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি জানান, ‘হয় মাদক, নয়তো তিনি- যে কোন একটি থাকবে জেলায়।’ আর তার এই কথার প্রতিফলন ঘটাতে প্রতিদিন জেলায় কমবেশি আটক হচ্ছে, মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবী। কয়েকদিন আগে দুই মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।