সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক সমস্যা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সমস্যা রাজনীতিকরাই সৃষ্টি করেছেন। এটি রাতারাতি দূর হবে না।

শনিবার সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সপ্তম জাতীয় সম্মেলনে একথা বলেন এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মুখে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।

রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে সারাদেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রায় এক হাজার সুজন প্রতিনিধি যোগ দেন।

আকবর আলী খান বলেন, ‘সিভিল সমাজকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। যদিও তারা সব সময় রাজনীতি এড়াতে পারে না। তবে স্বতন্ত্র থাকাই ভালো। বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যা রাতারাতি দূর হবে না। কারণ রাজনৈতিকরা এ সমস্যা সৃষ্টি করেছেন। ২০ দফার পরিবর্তে এখন এক দফা দাবি তোলা দরকার, সেটা হলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন।’

দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং ভবিষ্যতেও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না মন্তব্য করে সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘আজকের বিরাজমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সুজনের এ সম্মেলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আজকে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অথচ গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতেও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা দেখি না। তাই দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণকে সোচ্চার করে তুলতে হবে।’

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা বলেন, ‘গণতন্ত্র চলতে পারে যখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত হন। আর এই প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন নির্বাচনের মাধ্যমে। তাই যোগ্যদের নির্বাচিত করা গেলে গণতন্ত্র কাজ করতে পারে এবং সুশাসন বিরাজ করতে পারে।’

বিগত সময়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সুজনসহ অন্যান্যদের ধারাবাহিক অ্যাডভোকেসির ফলে দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিভিন্ন সংস্কার সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে সাবেক এই সিইসি বলেন, ‘এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সচিবালয়, আরপিও এবং আচরণবিধির সংশোধন, প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও আয়-ব্যয়ের বিবরণ দেয়ার বিধান ইত্যাদি। কিন্তু এতসব সংস্কারের পরও আজ আমরা কেন গণতন্ত্র ও সুশাসন নিয়ে চিন্তিত?

তিনি বলেন, ‘একটা দেশ তার মাটির জন্য বড় হয় না। দেশের মানুষ ভালো ও যোগ্য হলে দেশও ভালো ও যোগ্য হয়। তাই যতই আইন করা হোক না কেন, যদি সেগুলো কার্যকর না হয় এবং সমভাবে সবার জন্য বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।’

সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সুজন সচেতন নাগরিকদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা সংগঠন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুজন যেসব কাজ করছে তার মধ্যে অন্যতম হলো- ১. নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করা, ২. রাজনৈতিক সংস্কার-সংক্রান্ত কার্যক্রম, ৩. বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী ও জন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জনমত সৃষ্টি, ৪. নাগরিক অধিকার আদায়ে সোচ্চার করা।’

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দেশ আজ শুধু গণতন্ত্রহীনই নয় বরং এক নতুন রাষ্ট্র কাঠামো দাঁড় হয়েছে। আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে প্রতিনিয়ত নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। তাই আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হতে হবে। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সুজনের নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার, সুজনের সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, জাতীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031