ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক থেকে এবার এক কোটি ৫০ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৮ টাকা পাওয়া গেছে কিশোরগঞ্জের । যা দানবাক্সগুলো থেকে পাওয়া দানের হিসাবে এ যাবতকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শনিবার বিকালে গণনা শেষে এই টাকার হিসাব পাওয়া যায়। বিপুল পরিমাণ দানের এই নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও দান হিসেবে বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে।

এর আগে গত বছরের ২৬শে অক্টোবর রেকর্ড সর্বোচ্চ এক কোটি ৫০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৯৮ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাধারণত তিন মাস পর পর পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়। প্রতিবারই দানের টাকা কোটি ছাড়িয়ে যায়। এবার তিন মাস ১৯ দিন পর দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়। গত বছর ১৩ই জুলাই এক কোটি ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫০ টাকা এবং ১৩ই এপ্রিল এক কোটি ৮ লাখ ৯ হাজার ২শ’ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

এছাড়া গত বছরের শুরুতে ১৯শে জানুয়ারি পাওয়া যায় এক কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৩ টাকা। অর্থাৎ গত এক বছর ২৬ দিনে পাগলা মসজিদে দান হিসেবে পাঁচ কোটি ২৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৪৬ টাকা পাওয়া গেছে। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক লাখ ৩৪ হাজার টাকা মসজিদটিতে মানুষ দান করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শনিবার সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দান সিন্দুক খোলা হয়। দান সিন্দুক থেকে টাকা খুলে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা। টাকা গণনায় মসজিদ মাদরাসার ৬০জন ছাত্রশিক্ষক ছাড়াও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ অংশ নেন।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার তত্ত্বাবধানে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পৌরমেয়র মাহমুদ পারভেজ, সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফজলে রাব্বি, মাহামুদুল হাসান, মো. উবায়দুর রহমান সাহেল ও শফিকুল ইসলাম, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা প্রমুখ টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন।

এছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান টাকা গণনার কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় সিন্দুক খোলা কমিটির সদস্যরা ছাড়াও প্রশাসনের কর্মকর্তা, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন। টাকা গণনার এই এলাহী কা- নিজ চোখে অবলোকন করতে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ মসজিদে ছুটে যান।

প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানসিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। কথিত আছে, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনোবাঞ্চা পূর্ণ হয়। সেজন্য দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন।

টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে এবার এক কোটি ৫০ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৮ টাকা পাওয়া গেছে। টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এছাড়া ডলার, রিয়ালসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা স্বর্ণালঙ্কার পাগলা মসজিদের দান বাক্সে জমা পড়েছে।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবন। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদটিকে ঘিরে চলছে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ। এছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031