নাব্য সংকটে নৌ-যানজটের শিকার হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য পড়েছে হুমকির মুখে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পাটলাই নদীতে । এই নদীকে কেন্দ্র করে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় অর্ধলক্ষ শ্রমিক জড়িত রয়েছে। নদীর তলদেশ খনন না করার কারণে বালু-পাথর বহনকারী স্টিলবডি শত শত নৌযান আটকা পড়েছে। ফলে ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ১৫-২০ দিনের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। লাভের পরিবর্তে ক্ষতির শিক্ষার হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আর এ সুযোগে বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজি করছে স্থানীয় সংঘবদ্ধ চক্র।
জানা গেছে, এ উপজেলার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাইরের জেলা ও উপজেলার সঙ্গে মালামাল পরিবহনে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই, বর্ষায় ও হেমন্তে নৌ-পথই ভরসা। প্রতি বছর কোটি কোটি ঘনফুট উপজেলার সীমান্তবর্তী বড়ছড়া, বাগলী, চাড়াগাঁও তিনটি শুল্ক স্টেশন থেকে কয়লা, চুনাপাথর এবং উপজেলার বালু ও নুরী পাথর কিনে ভৈরব, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ, আশুগঞ্জ, ফতুল্লাসহ সারাদেশে যোগান দেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলা সদরের ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভপুর, মধ্যনগর, ধর্মপাশাসহ পাশ্ববর্তী নেত্রকোণা, কমলাকান্দা, মহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ভৈরবসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে বিভিন্ন মালামাল নৌ-পথে পরিবহন করে যোগাযোগ রক্ষা হয়। এসব পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম নদীপথ। কিন্তু নদীগুলোর নাব্য সংকটে অক্টোবর মাস থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। আর বিপন্ন হতে চলেছে নদীপাড়ের লোকজনের জীবন ও জীবিকা।
এ উপজেলায় আসা দেশের বিভিন্ন উপজেলা ও তাহিরপুর উপজেলাসহ মালবাহী নৌযান শ্রমিকরা ওই সব নদীতে চলাচল করতে গিয়ে দিনের পর দিন আটকা পড়ে মানবেতন জীবনযাপন করছেন।
নৌ শ্রমিক সাজিদ মিয়া, রফিক উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, পাটলাই নদীর নাব্য সংকটে পাটাবুকা থেকে কানামইয়া বিল পর্যন্ত নৌ-জটের সৃষ্টি হয়েছে। পাটলাই নদীটি বড়ছড়া থেকে শ্রীপুর বাজার পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এবং সোলেয়মানপুর এলাকায় পাটলাই নদীর শাখা নদী পাইকর তলা নদীতে দুই কিলোমিটার, বৌলাই নদীটির তাহিরপুর সদর থেকে সেলাইমানপুর ও তাহিরপুর থেকে সুলেমানপুর পর্যন্ত শুকিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। পুলিশ টহলে থাকলে সাময়িক সময় নৌ-শ্রমিকরা ভালো থাকলেও পুলিশ চলে গেলে তারা চরম আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় সময় পার করতে হয়।
চুনাপাথর ও কয়লা ব্যবসায়ীরা রফিক উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, নাব্য সংকটের কারণে ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ১৪-১৫ দিন সময় লেগে যায়। সময়মতো মালামাল ক্রেতাদের দিতে পারি না। এতে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, নদীটির নব্য হারানোর কারণে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এই নৌ যানজট সৃষ্টি। এখানে আটকেপড়া নৌযানের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি টহল রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, প্রতি বছর নৌজটের কারণে নৌ মালিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এ থেকে মুক্তির জন্য আমার ও আমার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।