ঢাকা:দুই মেয়রকে মন্ত্রী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এবং নারায়ণগঞ্জের মেয়রকে উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
গত বছর এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ভোটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন সাঈদ খোকন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।
নতুন প্রজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণের দুই মেয়র পূর্ণ মন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জের মেয়র উপমন্ত্রীর মর্যাদায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। মন্ত্রিপরিষদ-সচিব বলেন, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে এই মর্যাদা বৃদ্ধি করা হলো।
এর আগে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির আদেশে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মন্ত্রী পদমর্যাদা এবং চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়ররা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকারের সময় এ আদেশ বাতিল করার পর এসব সিটির মেয়ররা আর সেই মর্যাদা পাচ্ছেন না।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার দুই মেয়র ও নারায়ণগঞ্জের মেয়রের মর্যাদা নতুন করে নির্ধারণ হলো।
এর আগে ২০০৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, খুলনা, রাজশাহী, বরিশালে ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়ররা প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদাসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।
চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও রংপুরের মেয়রদের সাংসদদের ওপরে মর্যাদা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ২০১৩ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে চিঠি দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক চিঠিতে জানায়, সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মাসিক সম্মানী ভাতা ও অন্যান্য সুবিধার সঙ্গে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রীর পদমর্যাদার কোনো সম্পর্ক আছে বলে প্রতীয়মান হয় না।
মহাজোট সরকারের দুই মেয়াদে ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ দেশে ১১ জন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এসব মেয়রের পদমর্যাদা নির্ধারণ করেনি সরকার। পদমর্যাদা ঠিক না হওয়ায় রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে মেয়ররা কী ধরনের প্রোটোকল পাবেন তা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (রাষ্ট্র পদমর্যাদার ক্রম প্রণয়ন) অনুযায়ী মেয়ররা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী না এমপিদের মর্যাদায় আসন পাবেন, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়।
মহাজোট সরকারের গত মেয়াদে (২০১৩ সাল) অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৯ মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে দুজন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে একজন মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর সরকারের ভেতর ও বাইরে এই তিন মেয়রের পদমর্যাদা দেয়া নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। পাশাপাশি ২০১৩ সালের ৯ জন মেয়রের পদমর্যাদার বিষয়টিও আলোচনায় আসে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, মেয়রদের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয়ার বিষয়ে আইনে কিছু উল্লেখ নেই। তাদের দাবি, বিএনপি সরকারের আমলে আইনবহির্ভূতভাবে এ ধরনের মর্যাদা দেয়া হয়। তখন ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা পেতেন। সে হিসেবেই তিনি যাবতীয় সুবিধা ভোগ করেন।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর একটি চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, ‘রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়ররা সরকারের প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর পদমর্যাদা নির্ধারণ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু পরে আর বিষয়টি এগোয়নি।
তাই নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুরের মেয়ররা প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পাননি। ২০১৩ সালে রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে বিজয়ী হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। এদেরও পদমর্যাদা দেয়া হয়নি। উল্টো ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে তাদের পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।
১৯৯০ সালে এরশাদ আমলেই ঢাকার মেয়র হিসেবে প্রথম নাজিউর রহমানকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হয়। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ আমলের দুই মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও মোহাম্মদ হানিফ পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন। তৎকালীন সরকার একটি নির্বাহী আদেশে তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করেন।