প্রায় ৪২ হাজার সৌদি আরবে অবস্থিত রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে একটি তালিকা দিয়েছে দেশটির সরকার ।
সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি এই পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করে সৌদি আরবে গেছে এবং বর্তমানে সেখানে অবৈধভাবে অবস্থান করছে। এ কারণে তাদের ফেরত পাঠাতে চায় সৌদি আরব।
তবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক না হওয়ায় তাদের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি সরকার।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে সৌদি সরকার ২০০, ৩০০ বা ৫০০ রোহিঙ্গার তালিকা দিতো ফেরত নেওয়ার জন্য এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলে তাদেরকে ফেরত নিয়ে আসা হতো। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে তারা আমাদেরকে ৪২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেয়।’
এত লম্বা তালিকা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক অবস্থা এবং বর্তমান নীতির কারণে এখন কম সংখ্যক বিদেশিকে সৌদি আরবে গ্রহণ করতে চাইছে। সেজন্য তারা এই তালিকা বানিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়, দেশটিতে অবস্থানরত আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকেও সৌদি সরকার ফেরত পাঠাতে চায়। এই তালিকা সেটির প্রথম ধাপ। আমরা এখন তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখছি।
মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জানান, ‘২০০৭ সালে অবৈধ রোহিঙ্গাদের বিষয়টি প্রথম উত্থাপন করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এরপর বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্ন রকম তালিকা দিয়েছে আমাদের।’
তবে সৌদি সরকার তালিকা দিলেও বাংলাদেশ তাদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী নয় আভাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়, সে কারণে তাদের ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা আছে।’
আমরা আমাদের বক্তব্য সৌদি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বলেছি ওই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে গেছে কিনা সেটি যাচাই বাছাই করতে হবে, তিনি জানান।
এসব রোহিঙ্গাদকে ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল সৌদি সরকার কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি তাদের নিতে অস্বীকার করেছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সরকারের নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য ও নির্যাতনের কারণে নিজ বাসভূমি রাখাইনে টিকতে না পেরে তারা দলে দলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। এরমধ্যে তারা সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আছে বাংলাদেশে (এগারো লাখের বেশি) এবং এরপরে সৌদি আরবে। সৌদি আরবে কত সংখ্যক রোহিঙ্গা আছে তার সঠিক হিসাব সরকারের কাছে না থাকলেও ধারণা করা হয় অবিভক্ত পাকিস্তান থাকাকালীন সাগর পথে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা সৌদি আরবে যায়। তখন থেকেই সেখানে তারা বসবাস করছে। এছাড়াও সৌদি আরব সরকারের দাবি, পরবর্তীতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করেও কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা সৌদি আরব গেছে।