প্রকাশ্যে দিনের আলোতে সাবেক পুলিশ পরিদর্শক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা একে এম নুরুল আজম চৌধুরীকে গলা কেটে নির্মম হত্যার ঘটনায় জড়িতকে গ্রেফতার করেছে এলিট বাহিনী র্যাব।
র্যাব-৭ চট্টগ্রামের একটি বিশেষ টিম রাউজান উপজেলার পথেরহাট বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামী শেখ সোহরাব হোসেন সাদিচকে (২৬) কে রোববার রাতে গ্রেফতার করে।
পরে তার বাসা থেকে রক্তমাখা জামা কাপড় ও কামারের দোকান থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ৩৩ ইি লম্বা ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারের পর ওই যুবক খুনের কথা স্বীকার করেছে।
তার দাবি তাকে দেখেই ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতেন সাবেক উপ-পুলিশ পরিদর্শক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আজম চৌধুরী (৭২)।আর এর বদলা নিতে গেল পাঁচ মাস ধরে তাকে খুনের পরিকল্পনা করে সাদিচ। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছোরাটি সে এক হাজার টাকায় কিনে। খুনের পর তা পানিতে ধূয়ে ফের ও কামারের দোকানে ফেরত দেয়া হয়। তার দেখানো মতে সেখান থেকে ছোরাটি উদ্ধার করে র্যাব।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, সাদিচ অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় খুনের পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন করেছে। শনিবার সকালে প্রকাশ্যে রাউজান উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের হারপাড়া গ্রামে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে মাথা বিছিন্ন করে ফেলে যায়। খুনের পর দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে সে।
এরপর আলামত গোপন করতে পুকুরের পানিতে ছোরাটি ধূয়ে নেয় এবং তা কামারের কাছে ফেরত দেয়। র্যাব জানায়,
রাউজান উরকিরচর ইউনিয়নের হারপাড়া গ্রামের শেখ মোহাম্মাদ বাড়িতে থাকতেন
গ্রেফতার সোহরাব। আসামী স্বীকার করে হত্যাকান্ডের সময় তার পরিহিত রক্তমাখা
জামা কাপড় তার বসত ঘরে রয়েছে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে রাউজান উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের হারপাড়া গ্রামের জনৈক শেখ মোহাম্মাদের বাড়িতে শেখ সোহরাব হোসেন সাদিচের সেমি পাঁকা ঘরের প্রথম কক্ষে কাঠের তৈরী সোফা চেয়ারের উপর তার দেখানো মতে হত্যার সময় পরিহিত কাপড় উদ্ধার করা হয়।
এরমধ্যে আছে হালকা কালো রংয়ের রক্তমাখা ভেজা জিন্স প্যান্ট, একটি লাল, সাদা, কালো ও ছাই রংসহ বিভিন্ন রংয়ের ফুল হাতাওয়ালা রক্তমাখা ভেজা শার্ট, একটি জলপাই রংয়ের রক্তমাখা ভেজা সোয়েটার ও একটি আকাশী রংয়ের হাফহাতা রক্তমাখা গেঞ্জি।আসামী রক্তের দাগ মুছে ফেলার জন্য সকল জামাকাপড় ধুয়ে শুকাতে দেয় বলেও উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে স্বীকার করে।
র্যাব জানায়, এ হত্যাকান্ডে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা জানার জন্য নিয়মিত তদন্তের পাশাপাশি র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখবে।
উল্লেখ্য, ঘটনার দিন রাতে রাউজান থানায় নিহতের ছোট ভাই এনাম চৌধুরী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে থানায় একটি মামলা রুজু করেন।
এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা একে এম নুরুল আজম চৌধুরী (৭৫) কে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। গত (৯ ফেব্রুয়ারী) রবিবার বাদে আছর হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজের পরে পারিবারিক কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়।
দাফনের আগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। জানাযার নামাজে হাটহাজারী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ নুরুল আলম, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, গড়দুয়ারা ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ উপস্থিত ছিলেন।