ঢাকা: প্রশাসনিক কারণে দেশের ৩৩টি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও বিদেশের ১৬টি ভিসা সেল নির্দিষ্ট সময়ে চালু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর।প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ-মেশিন থাকা সত্বেও দক্ষ জনবলের অভাব ও চলতি জুন মাসের মধ্যেই সেগুলো চালুর কথা ছিল।পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র জানায়, ভিসা সেল ও চেকপোস্ট চালুর মতো দক্ষ জনবল এখনও তৈরি হয়নি। ফলে একদিকে হাতে লেখা ভিসা নিয়ে বিদেশিরা যেমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, অন্যদিকে তেমনি অব্যবহৃত মেশিনগুলো নষ্ট হওয়ার পথে।
সূত্র জানায়, ‘ইন্ট্রোডাকশন অব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) অ্যান্ড মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় ৬৭টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ৬৫টি বাংলাদেশ মিশন, ১৬টি ভিসা সেল, ৭০টি এসবি অফিস, ৩৩টি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, একটি ডাটা সেন্টার, একটি ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় এবং একটি পার্সোনালাইজেশন সেন্টারের কাজ চলমান আছে।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সবগুলোর অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
তবে দক্ষ জনবলের অভাবে এখনই চালু হচ্ছে না বিদেশের ভিসা সেল ও দেশের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মহিবুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগামী ৩০ জুন এগুলো চালুর কথা ছিল। কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবসহ নানা কারণে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য এ কাজের মেয়াদ ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে’।
‘তবে প্রকল্পের আওতায় অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করেছি। শুধু বিদেশের ভিসা সেল ও দেশের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কাজ বাকি আছে। সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের আওতায় যে অর্থ বরাদ্দ আছে, তার মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন হবে’।
তিনি জানান, ৩৩টি জেলায় বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের নতুন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস তৈরি করা হয়েছে। এসব আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ডাটা এজ লিমিটেড কোম্পানির মাধ্যমে এমআরপি-এমআরভি কার্যক্রম চালু আছে। আইরিশ কর্পোরেশন বারহাড জেভির সঙ্গে প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী ওয়ারেন্টি সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার সরবরাহ করা হয়েছে। তবে কিছু যন্ত্রাংশ সরবরাহ সম্ভব না হওয়ায় বিল দেওয়ায় বিলম্বসহ নির্ধারিত সময়ে কার্যক্রমটি সম্পন্ন করা যাচ্ছে না।
অবশিষ্ট যন্ত্রাংশ ৩০ জুনের মধ্যে সরবরাহ শেষ হবে জানিয়ে মো. মহিবুল হক বলেন, ‘এ পর্যন্ত স্থাপিত যন্ত্রপাতির মেয়াদ প্রায় সাত বছর অতিবাহিত হওয়ায় সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। যা প্রকল্প কর্মকর্তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা জরুরি’।দেশের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলোতে যে সকল ভারি প্রিন্টিং মেশিন রয়েছে, সেগুলো বর্তমানে এমআরপি প্রিন্টিং মেশিন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে প্রকল্পের কারিগরি দিক পরিচালনার মতো দক্ষ জনবল এখনও তৈরি হয়নি। অন্যদিকে ৬৫টি বিদেশি দূতাবাসে যে এমআরভি যন্ত্রপাতি স্থাপিত হয়েছে, সেগুলো এমআরভি ইস্যুর জন্য ব্যবহারের কথা। কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবে বিদেশেও মেশিন রিডেবল ভিসা চালু না করে এখনও হাতে লেখা ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে’।
‘এসব কারণে প্রকল্পের সময় আরও এক বছর বৃদ্ধি করা হবে’ বলেও জানান তিনি।
প্রকল্পটি ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন মেয়াদে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। মূল প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৮৩ কোটি টাকা। কয়েক দফায় বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৯৩ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।
তবে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর জানিয়েছে, এবার প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও ব্যয় বাড়বে না। মোট ব্যয়ের মধ্যে এখনও ৪৪ কোটি টাকা খরচ হয়নি। প্রকল্পের বাকি কাজ সম্পন্ন করতে এ অর্থ খরচ করা হবে।