ভারতীয়দের দাপট৷ বিশেষ করে তারা পোশাক, বায়িং হাউজ, আইটি এবং সেবা খাতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছেন বাংলাদেশের বেসরকারি চাকরির বাজারে এখন ৷ এর পরেই শ্রীলঙ্কা চীনের অবস্থান৷ তবে মোট বিদেশির কমপক্ষে অর্ধেক ভারতীয়৷ করোনা ভাইরাসের কারণে চীনাদের দাপট কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় ভারতীয়দের দাপট আরো বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন৷
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বুধবার তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে বাংলাদেশে মোট বিদেশি দুই লাখ ৫০ হাজার৷ তাদের মধ্যে বৈধ ৯০ হাজার৷ বাকিরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আছেন৷ আর যারা বৈধভাবে আছেন তাদের মধ্যে ৫০ ভাগ কোনো অনুমতি না নিয়েই টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন৷ এই বিদেশিরা বছরে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচার করেন৷ টিআইবি বাংলাদেশে বিদেশিদের হিসাব করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ২০১৮ সালে দেয়া ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বৈধ বিদেশির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে৷ কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি।
বাস্তবচিত্র আরো ভয়াবহ: বাংলাদেশে দু’টি তৈরি পোশাক কারখানার মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে নানা কারণে পোশাক খাতে ভারতীয়দের অবস্থান শক্ত৷ এর মধ্যে পোশাক খাতে কয়েকটি বিষয়ে দক্ষ জনশক্তির অভাব আছে৷ আর পোশাকের বায়িং হাউজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ভারতীয়রা৷ ফলে পোশাক কারাখানাগুলো বায়ার পেতে তাদের কারখানায় মার্কেটিং এবং হিসাব বিভাগেও ভারতীয়দের নিয়োগ করে৷ তাদের মতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে এক লাখেরও বেশি ভারতীয় কাজ করেন৷ অন্যদিকে বায়িং হাউজে এই সংখ্যা আরো আরো বেশি৷
এর বাইরে আইটি খাতেও ভারতীয়দের দাপট৷ আরো
অনেক সেবা খাত আছে যেখানে ভারতীয়রা কাজ করেন৷ এমনকি বাংলাদেশের
সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞাপন, কনসালটেন্সি এসব খাতেও ভারতীয়রা রয়েছেন৷ সবমিলিয়ে
বাংলাদেশে কম করে হলেও পাঁচ লাখ ভারতীয় কাজ করে বলে ধারণা করা হয়৷ কিন্তু
তাদের অধিকাংশেরই কোনো ওয়ার্ক পারমিট নেই৷ তারা ট্যুরিস্ট ভিসায় আসেন৷ আর
তাদের বেতন অনেক বেশি৷ ট্যুরিস্ট ভিসায় যারা কাজ করেন তাদের আয়করা পুরো
অর্থই অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে চলে যায়৷
বাংলাদেশের আইটি খাতের একজন
উদ্যোক্তা জানান, ‘‘সফটওয়্যার ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে ভারতীয় কৌশল
ব্যবহারের কারণে ওই দেশের জনশক্তিকেও কাজ দিতে হয়৷ শুধু তাই নয় অনেক
ক্ষেত্রে তাদের লোক রাখার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়৷ আবার ট্রাভেল এজন্টদের বড়
একটি অংশ ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রণে৷ তাই তাদের সফটওয়্যার ও তাদের লোক বলে কাজ
হয়৷ এটা সরকারের পলিসির বিষয়৷ সরকার সলিসি ঠিক করলে তাদের দাপট কমবে৷’
বাংলাদেশের
চাকরির বাজার নিয়ে কাজ করা সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হলো বিডিজবস ডটকম৷
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘‘কর্মরত বিদেশিদের
মধ্যে ভারতীয়রাই শীর্ষে৷ তারপরে শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড৷ এদেরমধ্যে
শতকরা ১০ ভাগেরও ওয়ার্ক পারমিট নেই৷ অধিকাংশই অবৈধভাবে কাজ করেন৷ তাদের
পেমেন্টও এখানে করা হয়না৷ ভারতীয় হলে তার পেমেন্ট ভারতেই দেয়া হয়৷ যারা
নিয়োগ করেন তারা এরকম একটা সিস্টেম গড়ে তুলেছেন৷’’
বাংলাদেশ থেকে কত
রেমিটেন্স দেশের বাইরে যায় সেই হিসাবটি দেখলে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের
সংখ্যা সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যায়৷ আর বাংলাদেশ থেকে ভারতেই বেশি
রেমিটেন্স যায়৷ পোশাক খাতের আয়েরও বড় একটি অংশ তাদের টেকনিশিয়ান ও
ডিজাইনাররা নিয়ে যান৷
বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ জানান,
‘‘প্রতিবছর আমাদের দেশ থেকে চার-পাঁচ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে৷
আর এবার আমাদের রেমিটেন্সের টার্গেট ২০ বিলিয়ন ডলার৷ তাহলে আমরা যা আনতে
পারি তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ আবার বিদেশি কর্মীদের দিয়ে দিতে হয়৷ এ থেকে
বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়৷ এটা আমি বলছি
বৈধ চ্যানেলের কথা৷ অবৈধভাবে কত যায় সেটা সরকার উদ্যোগ নিলে জানতে পারে৷
কিন্তু উদ্যোগ নেই৷ এই অর্থ সবচেয়ে বেশি যায় ভারত ও শ্রীলঙ্কায়৷ আমার কাছে
অবাক লাগে এখানে একাউন্টেন্ট, প্রশাসনিক কাজেও বাইরে থেকে লোক আনা হয়৷’’
সূত্র: ডয়চে ভেলে