দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়াসহ চারটি দেশে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে ।
দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, অর্থ পাচারের সাথে জড়িতদের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আনার ব্যাপারেও পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে।
দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি সংস্থা টিআইবি বলেছে, বাংলাদেশ থেকে বছরে ১৫০০ কোটি ডলার পাচার হচ্ছে। তবে বিষয়টিতে লাগাতার চেষ্টা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে কোনো লাভ হবে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ থেকে হংকংয়ে অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পর সেই অর্থ সেখানকার আদালতের মাধ্যমে জব্দ করে রেখেছে দুদক। এই অর্থের ব্যাপারে আরও তদন্ত করা হচ্ছে।
এছাড়া দুদক সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে অর্থ পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, এই দেশগুলোতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তারা তদন্ত শুরু করেছেন।
“আমরা ইদানিং কিছু তথ্য পাচ্ছি যে, যারা এভাবে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে তা পাচার করেছে বিভিন্ন জায়গায়। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ড-এই চারটি জায়গার মধ্যে আমরা দু’টো জায়গা থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি। আর বাকি দেশগুলোর তথ্যের অপেক্ষায় আছি।”
“আমরা
আমাদের আদালতের আদেশ নিয়ে হংকংয়ের আদালতে আবেদন করে অর্থ জব্দ করে
রেখেছি। কত মিলিয়ন ডলার, সেটা আমরা এখন বলবো না। আর সিঙ্গাপুরে আমরা তথ্য
পেয়েছি, অনেকগুলো ফ্ল্যাট এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের – এইগুলো নিয়ে আরও
তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
মি: মাহমুদ আরও জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ঐ দেশগুলোতে পাঠানো হতে পারে।
অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের পর সেই অর্থ ক্যানাডাসহ বিভিন্ন দেশে যারা পাচার করেছেন বা করছেন, তাদের ব্যাপারেও দুদক বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছে।
এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় যেসব খবর প্রকাশ হচ্ছে, দুদক সেগুলোও আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখার কথা বলছে।
দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলছেন, অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে যারা বিদেশে পালিয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করে ফেরত আনার জন্য ইন্টারপোলের সহযোগিতাও তারা নেবেন।
“বিদেশে অর্থ পাচারকারী কিছু লোকের অবস্থান আমরা জানতে পেরেছি, তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলের সহায়তা আমরা চাইবো।”
দুদকের পক্ষ থেকে এসব উদ্যোগের কথা যখন বলা হলো, তখন গত বুধবার টিআইবি এক গবেষণায় বলেছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে কর্মরত বিদেশী কর্মীরা বছরে অবৈধভাবে ২৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করছে।
তবে বিদেশী কর্মীদের বিষয়টি দুদকের এখতিয়ারে নয়, এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সহ সরকারের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।
দুদক এখন বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে তৎপরতা জোরদার করার কথা বলছে। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ১০ বছর ধরে বাংলাদেশিদের অনেকের অর্থপাচারের মাত্রা বেড়ে চলেছে এবং পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় গেছে বলে তারা মনে করছেন।
“আন্তর্জাতিকভাবে যারা ব্যবসা করে, তাদের কেউ কেউ ডকুমেন্টে তথ্য হেরফের করে অর্থ পাচার করছে।
হুন্ডির মাধ্যমেও বড় অংকের অর্থ পাচার হচ্ছে। এটা উদ্বেগজনক অবস্থায় ঠেকেছে। বছরে ১৫০০কোটি ডলার পাচার হচ্ছে- এটা নি:সন্দেহে বলা যায়।”
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, অবৈধ অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থায় ধারাবাহিকতা এবং সদিচ্ছা প্রয়োজন।
“পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা বেশ জটিল। কারণ সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী প্রক্রিয়া চালাতে অনেক সময় লেগে যায়। সেজন্য এই অর্থ ফেরত আনতে চেষ্টা অব্যাহত রাখা দরকার। শুধু সময়ে উদ্যোগের কথা বলে লাভ হবে না।”
দুদকের চেয়ারম্যানও বলছেন যে, পাচার হওয়া অর্থ অন্য একটি দেশ থেকে ফিরিয়ে আইনগত প্রক্রিয়া অনেক জটিল। তবে তারা চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।
সূত্র- বিবিসি