নির্বাচন কমিশন (ইসি) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেকটা সেরে নিয়েছে । ভোটকেন্দ্র, ভোটকক্ষ ও অন্যান্য কাজ পর্যায়ক্রমে শেষ করা হয়েছে। এখন শুধু তফসিল ঘোষণার অপেক্ষায়।
ইসি সূত্র জানায়, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কার্যালয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের বিষয়ে সভা
অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় চসিক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওদিনই তফসিল
ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন একাধিক নির্বাচন কর্মকর্তা।
নির্বাচন কমিশনের ঢাকা ও চট্টগ্রামের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান,
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দিনক্ষণ নির্ধারণের কাজ চলছে।
মার্চের ১৩ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত দিনক্ষণ দেখা হচ্ছে। অন্যথায় মার্চের শেষ
সপ্তাহে হতে পারে। তবে মার্চের শেষ সপ্তাহে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ২৭
মার্চ শুক্রবার। এ নিয়ে আবার বিপত্তি রয়েছে। ১৭ মার্চ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এসব বিষয়গুলো চিন্তাভাবনা করেই তফসিল ঘোষণার দিন
দেখা হচ্ছে। তবে ১৩ মার্চকে ঘিরে কমিশন এগুচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বকোণকে
বলেন, ‘আমরা অনেকটা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ধাপে ধাপে সব ধরনের প্রস্তুতি
নেয়া হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়া হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যেই ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত নির্বাচনে ভোটকক্ষ ছিল ৭১৯টি। এবার দুটি বেড়ে ৭২১টি করা হয়েছে। ভোটার সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ ভোট। চলতি বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদে সিটি করপোরেশনের ৪১ ওয়ার্ডে ভোটার বেড়েছে প্রায় ৮৫ হাজার। নতুন ভোটারদের চসিক নির্বাচনে ভোট প্রদানে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হলেও এখনো চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। আগামী ১ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরমধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হলে নতুন ভোটাররা সিটি নির্বাচনে ভোট প্রদান করতে পারবে না।
চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান বলেন,
আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের সভায় সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে
সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওইদিন তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। ভোটগ্রহণের জন্য
৪৫ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তারা
ভোটকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছেন। ভোটগ্রহণের জন্য কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা
হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের স্বরস্বতী পূজার দিনে
ঢাকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে বিপাকে পড়েছিল নির্বাচন
কমিশন। বিপত্তির মুখে শেষে ভোটের দিনক্ষণ বদলাতে বাধ্য হয় ইসি। সেই চিন্তা
মাথায় রেখেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছিলেন, মার্চ মাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হতে পারে। এপ্রিলে রমজান ও এইচএসসি পরীক্ষা রয়েছে। সেই হিসাবে মার্চ মাস হতে পারে নির্বাচনের উপযুক্ত সময়।
সিইসি কে এম নূরুল হুদা আরও বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিনক্ষণ গণনা শুরু হবে। প্রথম সাধারণ সভা দেরিতে হওয়ার কারণে ঢাকার পরে অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে একই দিন নির্বাচন হলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার চেয়ে দেরিতে। তাই ঢাকার পরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
৭ ফেব্রুয়ারি সভায় তফসিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করা হয়েছে ভোটকেন্দ্র-ভোটকক্ষ