নোয়াখালী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নোয়াখালী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক ওসি আতাউর রহমান ভূঁঞার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ১ কোটি ৪৫ লাখ ৯শ ৬৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে ।

দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক অফিস ও নোয়াখালী দুদক অফিস সূত্রে থেকে জানা যায়, নোয়াখালী পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক অফিসার ইন-চার্জ মো: আতাউর রহমান ভূঁঞা ১৯৮৪ সালে কনষ্টেবল হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে এএসআই, ১৯৯৬ সালে এসআই ও ২০১০ সালে পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। তার চাকুরী জীবনে ৩৪ বছরে সে মোট ৫৩ লাখ টাকার আয়ের তথ্য পেয়েছে দুদক। কিন্তু তার এ আয়ের বিপরীতে সে খরচ করেছে স্থাবর সম্পদ ও অস্থাবর সম্পদ ১ কোটি ৯৮ লাখ ৬১ হাজার ৮২৯ টাকা। হিসেব করে দেখা যায়, তার বৈধ আয় থেকে অর্জিত সম্পদের পরিমাণ (স্থাবর অস্থাবর) ১ কোটি ৪৫ লাখ ৩৫ হাজার ৯৬৬ টাকা বেশী। যা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ ভাবে অর্জন করেছে বলে দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা তার অনুসন্ধান রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের স্মারক নং- দুদক/১৫৪-২০১৭/অনু ও তদন্ত-২/নোয়াখালী/৩৮৮২০, তারিখ ২৮-১১-১৭ই ও দুর্নীতি দমন কমিশন, সাজেকা, নোয়াখালীর/আর নং-০১/১৮ তারিখ ১৪-১-১৮নং তারিখের সূত্রের আলোকে সে অনুসন্ধান করে নোয়াখালীর ডিবির সাবেক ওসির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেন যে, এ কর্মকর্তা তার চাকুরী জীবনে আয় বহির্ভূত ভাবে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৩৫ হাজার ৯শ ৬৬ টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জন করেছে। এর মধ্যে ঢাকার ডেমরা থানার ডগাইর মৌজার ৪.৭৫ শতাংশ ভূমি ক্রয় করে তার বাড়ি নির্মাণ, কমলাপুর স্টেডিয়ামে তার স্ত্রীর নামে দোকান, ডিসিসি ঢাকা মেডিকেল রোড সাইট মার্কেটে স্ত্রীর নামে দোকান, পশ্চিম রাজাবাজারে ১৮৮০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং ঢাকা এশিয়া ব্যাংকে নিজ নামে ২১ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং ইসলামী ব্যাংক লি:, ভিআইপি রোড শাখায় স্ত্রী সেলিনা রহমানের নামে ৮টি একাউন্টে ১৯ লাখ ২৪ হাজার ৫৩৬ টাকা রয়েছে (ব্যাংকের এ হিসাবগুলি দুদক লেনদেন বন্ধ করে রেখেছে)।

নোয়াখালী দুদকের উপ-পরিচালক অফিস সূত্র জানায়, তদন্ত কর্মকর্তা তার অনুসন্ধানের মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করে দুদকের উপ-পরিচালক ডিবির সাবেক ওসি আতাউর রহমান ভূঁঞা ও তার স্ত্রী সেলিনা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(১) ধারায় সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারীর সুপারিশ দিয়ে ১৮৭ নং স্মারকে কমিশনে প্রেরণ করেছেন এবং ডিবির ওসি আতাউর রহমান ভূঁঞাকে দুদকের নজরধারিতে রেখেছেন।

আরো জানা যায়, নোয়াখালীতে প্রথমে সুধারাম থানায় দারোগা হিসেবে যোগদান করে বদলী হয়ে যাওয়ার পর ফের তদবীর করে নোয়াখালীতে এসে ডিবির ওসির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান সরকারের টানা ৪ বছর স্বপদে থেকে বিভিন্ন মানুষকে ইয়াবা ট্যাবলেট পকেটে ঢুকিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বিপুল অংকের টাকা অর্জন করেন।

পরে দফায় দফায় নিরীহ লোকদেরকে হয়রানি শুরু করলে পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফ তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করেন। পরে তদবীর করে চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন। পরে সেখানেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় বদলী করা হয়। কবিরহাট পৌরসভার রড, সিমেন্ট ব্যবসায়ী শাহীনুল ইসলামকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে অস্ত্র ও ইয়াবা দিয়ে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠান। উক্ত ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ফুঁসে উঠে নোয়াখালী। পরে সদর সার্কেলের এএসপি খিসা চাকমা তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে রিপোর্ট দিলে তাকে ক্লোজড করা হয়।  

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031