চলন্তিকা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর রূপনগরের । এতে তিন শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। এক হাজার মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ঘটনায় দুইজন দগ্ধ হয়েছেন। তারা হলেন পারভিন বেগম (৩৫) ও শহিদুল ইসলাম (২০)। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। আহত পারভিনের অবস্থা আশংঙ্কাজনক। কী-কারণে আগুন লেগেছে তা বস্তিবাসী বা ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে কেউ সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য দিতে পারেনি।

গ্যাসের চুলা অথবা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা সিগারেটের আগুন থেকে আগুন লাগতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা টানা দেড় ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনের উৎস ও ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালককে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বস্তিবাসী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোর ৪ টার দিকে রুপনগর থানাধীন সড়কের পাশে চলন্তিকা বস্তির বাম পাশের একটি কক্ষ থেকে আগুনের ধোঁয়া বের হয়। এসময় বস্তির লোকজন ঘুমে ছিলেন। মানুষের চিৎকার শুনে বস্তিবাসীর ঘুম ভাঙ্গে। যে যার মতো পেরেছেন ঘর থেকে জীবন নিয়ে বাইরে বের হয়ে ফাঁকা স্থানে চলে যান। চোখের সামনে পুড়ে যায় সহায় সম্বল। ধোঁয়ায় আছন্ন হয়ে যায় বস্তির পুরো এলাকা। ভোরে বাতাসের কারণে আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৫ টি ইউনিট ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততোক্ষণে বস্তির প্রায় তিন শতাধিক ঘর পুড়ে যায়। বস্তির মধ্যে ধোঁয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অক্সিজেনের মাক্স নিয়ে ভেতরে আগুন নির্বাপন করেন। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসকে স্থানীয় লোকজনও সহযোগিতা করেন।

বস্তির উত্তর পাশের বাসিন্দা রিকশা চালক আব্দুস সালাম জানান, ভোরের দিকে সবাই ঘুমিয়ে ছিলো। চারদিকে আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনতে পাই। ঘুমের মধ্যে থাকার কারণে মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখছিলাম। এসময় আমার স্ত্রী মনি আমাকে হাত ধরে টান দিয়ে আগুন আগুন বলে চিৎকার করে। দ্রুত তখন আমার স্ত্রী ও বাচ্চা নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসি।
গতকাল দুপুরে চলন্তিকা বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ঘরের জিনিসপত্র সরাচ্ছিলেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় লোকজন সেখানে ভিড় করছিলেন। তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছিল। বস্তি বাসিরা জানালেন, এই বস্তিতে প্রায় ৯ হাজার লোকজন বসবাস করেন। অধিকাংশ নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ। কেউ গামেন্টর্স কর্মী, কেউ রিকশা চালক কেউ কায়িক শ্রমিক। ঘরগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি লাগায়ো। ফাঁকাস্থান তেমন নেই বললেই চলে।
শামসুল ইসলাম নামে গামেন্ট শ্রমিক কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, ২ বছর আগে ভোলার বোরহানউদ্দিন এলাকায় নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বস্তির একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছিলাম। গ্রামের বাড়ি নদী নিয়েছে আর বস্তির ঘর আগুনে নিলো। এখন কোথায় যাবো?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানান, বস্তিতে অবৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। ওই সংযোগ থেকে প্রত্যেক বাড়ি থেকে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন মাসে ১০০০ টাকা করে নিয়ে থাকে। এছাড়াও বস্তিতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন জানান, আগুনের প্রকৃত কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) দেবাশীষ বর্ধন। তদন্ত সাপেক্ষ আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি বলা যাবে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031