সাজু আক্তার ওরফে সাজুনি পনেরো বছরের অধিক সময় ধরে মাদক ব্যবসায় জড়িত । নগরীর বাকলিয়া থানার হাটখোলা চাঁনগাজি রোডে জমি কিনে ঘরও নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় লোকজনের কাছে সেটি ‘সাজুনির নতুন বাড়ি’ নামে পরিচিত। ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট তিন হাজার ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কারাভোগও করেন তিনি। অথচ পেশাদার এ ইয়াবা ব্যবসায়ীকে একটি ইয়াবা পাচারের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এতে বহনকারী ধরা পড়লেও মূল ইয়াবা পাচারকারী বরাবরাই ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেলো।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে বারোটায় নগরীর বাকলিয়া থানার পশ্চিম বাকলিয়া বগার বিল শান্তিনগর চট্টগ্রাম মহিলা মাদ্রাসা জামে মসজিদের সামনে থেকে সৈয়দুর রহমান ওরফে বাবুল (৪৫) ও স্বপ্না বেগম ওরফে স্বপ্না আরা বেগম (৪০) নামে দুই নারী-পুরুষকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে আট হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। সৈয়দুর রহমান কক্সবাজারের টেকপাড়া ইউনিয়নের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও স্বপ্না সন্দ্বীপের শিবহাটের শেখ সুকানীর বাড়ির মৃত মোহাম্মদ ফোরকানের স্ত্রী। এ ব্যাপারে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রবিউল হক বাদি হয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল এগারোটায় বাকলিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার সৈয়দুর রহমানের প্যান্টের সামনের
দুই পকেটে দুই হাজার ও স্বপ্না বেগমের হাতে থাকা একটি লাল শপিং ব্যাগের
ভেতরে ছয় হাজারসহ দুই জনের কাছে আট হাজার ইয়াবা পাওয়া যায়। এজাহারের দেয়া
তথ্য অনুযায়ী প্রতিটি ইয়াবার বাজারমূল্য ৩০০ টাকা হিসাবে আট হাজার ইয়াবার
বাজারমূল্য ২৪ লাখ টাকা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত তিনজন স্বাক্ষীর সামনে গ্রেপ্তার সৈয়দুর ও স্বপ্না
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানিয়েছে, ইয়াবাগুলো কক্সাবাজরের সীমান্ত এলাকা থেকে
কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে থাকে। আট হাজার ইয়াবা তারা কক্সবাজার
থেকে এনেছে। সাজু ওরফে সাজুনি ও সবুরা বেগমের কাছে ইয়াবাগুলো দেয়ার জন্য
তারা বাকলিয়া বগারবিলের শান্তিনগরে অপেক্ষা করছিলো।
নাম ঠিকান খুঁজে না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সাজু ওরফে সাজুনি ও সবুরা বেগমকে বাদ দিয়ে গ্রেপ্তার সৈয়দুর রহমান ও স্বপ্না বেগমকে বিরুদ্ধে গত ২১ ডিসেম্বর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) অঞ্জন দাশগুপ্ত।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৈয়দুর রহমান ও স্বপ্না বেগম ইয়াবা
ব্যবসায়ী। তারা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা এনে
চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে।
সাজু ওরফে সাজুনি ও জনৈক সবুরা বেগমের কাছে ইয়াবাগুলো দেয়ার কথা ছিলো।
আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার তদন্তকালে সাজু ওরফে
সাজুনি ও সবুরা বেগমের নাম ঠিকানা উদঘাটন করে গ্রেপ্তারের জন্য সোর্স নিয়োগ
করি। দুইজনের ঠিকানা সংগ্রহ করতে সব ধরনের চেষ্টা করি। তাদের স্থায়ী
ঠিকানা ও অস্থায়ী ঠিকানা সংগ্রহ করতে না পরায় দুইজনকে শনাক্ত করা সম্ভব
হয়নি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই অঞ্জন
দাশগুপ্ত জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা সাজুনি ও সবুরার ঠিকানা দিতে পারেনি।
তাই তদন্ত প্রতিবেদন থেকে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাজুনির নাম ঠিকানা না পেলেও অনুসন্ধানে জানা যায়, সাজুনি পেশাদার ইয়াবা ব্যবসায়ী। খুচরা ইয়াবা বিক্রির জন্য তার বেশ কিছু নারী পুরুষ রয়েছে। সবুরা তাদের একজন।
সাজুনির পুরো নাম সাজু আক্তার ওরফে সাজুনি। তার বাবা আবদুল হাই মারা
গেছেন। প্রথম স্বামী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মারা যাবার পর আবদুল মান্নান নামে
আর একজনের সাথে তার বিয়ে হয়। নগরীর বাকলিয়া থানার হাটখোলা চাঁনাগাজি রোডের
মাইন্যার বাপের বাড়ি এলাকায় জমি কিনে ঘর তৈরি করেছেন। স্থানীয় লোকজনের কাছে
সাজুনির নতুন বাড়ি নামে পরিচিত। নিজ বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরের নন্দীপর
সুনন্দী সরকার বাড়িতে। ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট বাকলিয়ার চাঁনগাজির রোডে নিজের
বাসা থেকে তিন হাজার ইয়াবসহ সাজুনিকে গ্রেপ্তার করেছিলো বাকলিয়া থানা
পুলিশ। এস আই মহিম উদ্দিন বাদি হয়ে সাজুনিকে আাসামি করে বাকলিয়া থানায় মাদক
দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ইয়াবা
পাচারের অভিযোগে সাজুনির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়।
এস আই হিমেল রায়ের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাজুনি পেশাদার ইয়াবা
ব্যবসায়ী। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে স্বল্পমুল্যে ইয়াবা এনে চট্টগ্রাম ও
ঢাকার বিভিন্নস্থানে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে। বাকলিয়ার চাঁনাগাজির রোডের জমি
কিনে বাড়িও তৈরি করেছেন সাজুনি।