২০০৪ সালের ০৪ এপ্রিল অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন অটিজম আক্রান্ত বিশেষ শিশুদের নিয়ে পথচলা শুরু করে । ৩২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এর পথচলা শুরু হলেও বর্তমানে নিয়মিত শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭০ জন, স্যাটারডে ও আরলি ষ্টিমুলেশন প্রোগামে ৪০ জন। শিক্ষক সংখ্যা ৭০ জন, অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৫ জন।
অটিজম আক্রান্ত বিশেষ শিশু/কিশোররা সঠিক পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণ পেলে তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারে এবং তারাও মেধারভিত্তিতে অবস্থান করে নিতে পারে সমাজের মূলস্রোতে। এই বিশ্বাসকে সামনে রেখেই আধুনিক শিক্ষা-পদ্ধতির পাশাপাশি সুন্দর পরিবেশে যুগোপযোগী, কর্ম ও বিনোদনমুখী প্রশিক্ষণের আয়োজন করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। নিয়মিত শিক্ষাপ্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও খেলাধুলা বিষয়েও নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আয়োজন করা হয় প্রতিযোগিতামূলক নানা অনুষ্ঠানের।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সাল হতে প্রতি এক বছর অন্তর বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত হয় অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ আর বিজয় উল্লাসে মুখরিত হয় সারাদিন, যা পরিনত হয় বিনোদনের এক মহাউৎসবে।
খেলাধুলা শিক্ষা-প্রশিক্ষণেরই একটি অংশ। এর মাধ্যমে ব্যক্তির শরীর ও মনের বিকাশ ঘটে, হাসি-আনন্দে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীদের নিষ্পাপ মন। যে আনন্দের বার্তা দিকে দিকে ছড়িয়ে যায়। অভিভাবকের মনে জেগে ওঠে আশার আলো, খুলে যায় সম্ভাবনার দুয়ার, প্রচারে বাড়তে থাকে সচেতনতা।
সেই আলোকে গত ০৩ জানুয়ারি সকাল ৯টায় “সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স” ১০/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা, অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এর ছাত্র-ছাত্রীদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বৈরী আবহাওয়ার কারণে সীমিত আকারে সম্পন্ন করা হয়। আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে নির্ধারিত কিছু খেলা ও বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ সম্ভব না হওয়ায় অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ ১৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় মধ্যেরচর, শ্যামলাপুর, কেরানীগঞ্জস্থিত এডব্লিউএফ এর নিজস্ব ক্যাম্পাসে আবার ডিসপ্লে, মার্চপাষ্টসহ বাকী ইভেন্টের খেলা ও বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন-এর গভর্নিং বডির সম্মানিত সদস্য এবং রানার গ্রুপ অব কোম্পানিজ-এর চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান।
অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার চেয়ারপারসন ডা. রওনাক হাফিজ।
অনুষ্ঠানটির সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন রানার গ্রুপ অব কোম্পানিজ।
বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২০ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসআরএম গ্রুপের সিএসআর, পিআর কমিউনিকেশনের প্রধান রুহী মুরশীদ আহমেদ, রানার গ্রুপ অব কোম্পানিজ এর পরিচালকবৃন্দ, কনফিডেন্স গ্রুপের পরিচালকবৃন্দসহ বিভিন্ন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্যবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ সমাজের নানা স্তরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত ১০ জন ছাত্র-ছাত্রী অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সহযোগিতার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণ করে।
বয়সভেদে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এর নিয়মিত ১৭০ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং স্যাটারডে ও আরলি ষ্টিমুলেশন প্রোগামে ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী দৌড়, বলথ্রো, বলকিক, চকোলেট দৌড়, অংক দৌড়, ভারসাম্য দৌড়, মিউজিক্যাল চেয়ার, বস্তা দৌড়ের মত নানা ইভেন্টের খেলাগুলোতে অংশ নেয়।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানটির সূচনা হয়। এরপর অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে জাতীয় সঙ্গীত, ছাত্র-ছাত্রীদের নয়নাভিরাম মার্চপাস্ট, শরীর চর্চাসহ মনোজ্ঞ ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতীয়মান হয় এই শিক্ষার্থীদের সুনিপুন দক্ষতা।
অনুষ্ঠানটির দ্বিতীয় পর্বের প্রধান আকর্ষণ ছিল “যেমন খুশি তেমন সাজো”, মিউজিক্যাল চেয়ার, বিভিন্ন ইভেন্টে ছাত্র/ছাত্রীসহ অভিভাবক ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণ।
সর্বশেষ আয়োজন- অংশগ্রহণকারীর ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ।
সভাপতির সমাপনী ঘোষণার মধ্যদিয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২০ এর পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।