এক বাবা তার কিশোরী কন্যার সর্বনাশ ঘটিয়ে ছেড়েছে সন্তানের জন্য পিতার স্থান পরম আশ্রয়ের হলেও । পাষণ্ড সেই বাবা টাকা দিতে না পেরে ‘নাবালিকা’ মেয়েকে তুলে দেয় পাওনাদারের হাতে। টানা এক বছর ধরে বাবার সহযোগিতায় মেয়েটিকে ধর্ষণ করে আসছিল সেই পাওনাদার। তাতেও ক্ষান্ত দেননি সেই অজাচারী বাবা। প্রবাসী স্ত্রীর অনুপস্থিতির সুযোগে তিনি নিজেও মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করত বলে প্রতিবেশিদের অভিযোগ।

ঢাকার কামরাঙ্গীচরের এই ঘটনায় ভুক্তভোগী সেই মেয়েটিকে উদ্ধার করে মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে। মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওসিসির প্রধান সমন্বয়কারী বিলকিস।

প্রতিবেশিদের কাছে খবর পেয়ে মঙ্গলবারই পাষণ্ড সেই বাবাকে গ্রেপ্তার করলেও আবুল মহাজন নামের প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এই ঘটনায় মোহাম্মদ ফয়সাল নামে মেয়েটির এক প্রতিবেশি কামরাঙ্গীরচর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-২৯।

পুলিশ জানিয়েছে, ভিকটিম তার বাবার সঙ্গে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় থাকে। মেয়েটির বাবা এক মুরগি ব্যবসায়ীর দোকানে কাজ করত। পাশাপাশি ভ্যান চালাতো। মহাজনের কাছ থেকে তিনি ছয় হাজার ধার নিয়ে শোধ দিতে না পেরে কিশোরী মেয়েকে পাওনাদারের তুলে দেয়। কখনও কখনও ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ওই মহাজনের কাছে দেয়া হতো মেয়েটিকে। আর এভাবেই দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হচ্ছিল মেয়েটি।

সবশেষ গত ১১ জানুয়ারি ধর্ষণের শিকার হয়ে ওই কিশোরী এক প্রতিবেশীকে ঘটনাটি জানায়। ফয়সাল নামের এক প্রতিবেশি ৯৯৯-এ ফোন করে জানালে পুলিশ এসে মেয়েটিকে উদ্ধার করে ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার বাদি ফয়সাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মেয়েটির পরিবার ও আমরা একই বাড়িতে ভাড়া থাকি। গত সোমবার সন্ধ্যায়  হঠাৎ করেই মেয়েটি আমার ঘরে আসে। তখন সে ঘুমে টলছিল। এই অবস্থা দেখে আমার স্ত্রী তাকে কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করে। সে আমার স্ত্রীর কাছে তাকে বাঁচানোর আকুতি জানায়। এরপর মেয়েটি আমার স্ত্রী কাছে সব খুলে বলে।’

তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী এই ঘটনা আমাকে জানালে আমি ও আমার দুই প্রতিবেশি তার বাবাকে হাতেনাতে ধরার চেষ্টা করি। একঘন্টা পর মেয়েটির বাবা বাসায় এসে মেয়েটিকে আমাদের ঘরে দেখতে পেয়ে তার কাছে ঘুমোয়নি কেন জানতে চায়। এই কথা বলেইমেয়েটিকে মারধর শুরু করে। আমরা তখনও হাতেনাতে ধরার চেষ্টায় চুপ ছিলাম।’

ফয়সাল জানান, এক পর্যায়ে মেয়েটির বাবা বুঝতে পারে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেছে। এরপর স্থানীয়দের জেরার মুখে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। আর এর মধ্যে আসল অভিযুক্ত সেই পাওনাদার আবুল মহাজনকেও ফোন করে তিনি পালিয়ে যেতে বলেন।

নিউ মার্কেটের একটি দোকানের কর্মচারী এই যুবক বলেন, ‘কিন্তু আমি মেয়েটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশে খবর দিই। পরে পুলিশ এসে মেয়েটিকে উদ্ধার আর তার বাবাকে আটক করে নিয়ে যায়।’

কামরাঙ্গীরচর থানার উপপরিদর্শক শেখ মোরশেদ আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মেয়েটির মা বিদেশে থাকে। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ওই ভাড়া বাসায় থাকত ভ্যানচালক সেই বাবা। তিনি ২০১৯ সালে মুরগি ব্যবসায়ী মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল।’

‘টাকা না দিতে পারায় কিশোরী মেয়েকে চেয়েছিল ওই মহাজন। এরপর থেকে বারবার ধর্ষণের শিকার হচ্ছিল মেয়েটি। মঙ্গলবার এক প্রতিবেশি ৯৯৯-এ ফোন করে এ ঘটনা পুলিশকে জানায়। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়েটির বাবাকে আটক করি। মেয়েটিকে উদ্ধার করে ঢামেকের ওসিসিতে ভর্তি করি।

বুধবার মেয়েটির বাবাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে পুলিশের এই এসআই বলেন, ‘তবে ঘটনার মূলহোতা আবুল মহাজন পালিয়ে গেছে। তাকে পালাতে সাহায্য করেছে মেয়েটির বাবা। তাকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031