স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ক্যাসিনো ও মাদক কারবারে জড়িতরাও ঢাকা সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন । তিনি মনে করেন, অন্যায়ভাবে উপার্জনের টাকায় অনেকে নির্বাচন করে গায়ের জোরে টিকে থাকতে চান। তবে তারা যেই হোক- রাজনীতিবিদ আর জনপ্রতিনিধি, তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না হুঁশিয়ার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার উদ্বোধন করতে এসে রবিবার দুপুরে কথা বলছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতায় বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা মমিনুল হক সাঈদের অংশ নেয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করে অনেকে টিকে থাকতে চান। আবার কেউ নির্বাচন করে গায়ের জোরে টিকে থাকতে চান। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে আমরা কাউকে ছাড় দিবো না।’
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে ক্যাসিনো ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতায় নাম আসে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদের। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার গত ২৬ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফেরেন। ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তার স্ত্রী ফারহানা আহম্মেদ বৈশাখীও এই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করছেন।
ক্যাসিনোর টাকায় কেউ কেউ নির্বাচন করছে প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অন্যায়ভাবে টাকা উপার্জন করেন তারা কীভাবে টাকা ব্যয় করতে হয় সেটা জানেন না। কাজেই তারা নানান ধরণের অন্যায় করে টিকে থাকতে চান।’
‘কেউ নির্বাচন করে গায়ের জোরে টিকে থাকতে চান। যে যেভাবেই টিকে থাকার চেষ্টা করুক না কেন প্রধানমন্ত্রী চান দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে। আমরা কাউকে ছাড় দিবো না। তিনি রাজনীতিবিদ হোক আর জনপ্রতিনিধি হোক। যারাই অন্যায় করবেন তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে, চলবে।’
‘নজরে আছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবা তৈরি হচ্ছে কি-না প্রশ্নের জাবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের জানা মতে সেখানে ইয়াবা তৈরি হচ্ছে না। ক্যাম্প একটি ছোট জায়গা। এগারো লক্ষ শরনার্থী রয়েছে। কেউ হয়ত ইয়াবার সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে কিংবা ছিল। ক্যাম্পের বাইরে এসে যারা এধরণের কাজ করছে তারা আমাদের নজরে আসছে এবং তাদেরকে আমরা ধরছি।’
‘এখন আর প্রকাশ্যে ধুমপান হয় না’
মানুষকে সচেতন করার কারণে দেশে এখন আর প্রকাশ্যে ধুমপান হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় ধুমপান প্রকাশ্যে হতো, এখন হয় না। কারণ এর কুফল সম্পর্কে মানুষকে আমরা জানিয়েছিলাম। আড়ালে-আবডালে কিছু কিছু ধুমপান করছে। একদম বন্ধ হয়নি- সেটা আমরা কখনও বলি না। কিন্তু ধুমপান যে ক্ষতিকর এটা আজকের জনগণ বুঝতে পেরেছে। এ জন্য প্রকাশ্যে কেউ ধুমপান করছে না।’
‘মাদকে আমরা ভিকটিম হচ্ছি’
পাশ্ববর্তী দেশের কারণে বাংলাদেশ মাদকের ভিকটিম হচ্ছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমাদের দেশ কখনও মাদক তৈরি করে না বা করতে দেয়া হয়না। কিন্তু ভিকটিম হচ্ছি। পাশ্ববর্তী দেশ থেকে আমরা ভিকটিম হচ্ছি। আমাদের দেশের ডিমাণ্ডের জন্য মাদক আসছে। আমরা সেই ভিকটিমকে খুঁজছি।’
বাংলাদেশে মাদকসেবীদের কাছে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলের চাহিদা বেশি। এর মধ্যে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ঢোকে ইয়াবা। আর ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসে ফেন্সিডিল।
মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি কাজ করছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সীমান্তের যেসব জায়গায় মাদক আসে সেসব জায়গায় আমরা বর্ডার রোড করতে যাচ্ছি। দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টার দিয়ে টহল বাড়ানো হচ্ছে। কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করেছি। আরো শক্তিশালী করব যাতে কোনও ধরণের মাদক যেন দেশের মধ্যে না আসে।’
মাদকের অভিযান ধীরগতি পেয়েছে কি-না সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মাদকের যারা বড় বড় সম্রাট ছিল, কারবারি ছিল তাদেরকে আমাদের নেটের (জাল) মধ্যে নিয়ে এসেছি। অনেককে আমরা কারাগারে প্রেরণ করেছি। আইনের মুখোমুখি করার জন্য অনেককে খুঁজছি। মাদকের ক্ষেত্রে আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী অত্যন্ত তুখোড় অবস্থায় রয়েছে। কাজেই মাদক বিস্তার রোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
কোরিয়ার সহযোগিতায় তৈরি সফটওয়্যারটির মাধ্যমে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যে কোনও জায়গা থেকে ল্যাপটপে বসে মামলার ফলোআপ, লাইসেন্স ম্যানেজমেন্ট, স্যাম্পল অ্যানালাইসিস ম্যানেজমেন্ট, অপারেশন ও হসপিটাল ম্যানেজমেন্টের কাজ করতে পারবেন। এছাড়াও অধিদপ্তরের নির্মিত ‘মাদককে না বলুন’ বিষয়ক একটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপন সম্প্রচার করা হয়।
কোরিয়ান অ্যাম্বাসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কোরিয়া আমাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের ডেভলপমেন্টের জন্য কোরিয়া পাশে দাঁড়িয়েছে। যদি এভাবে এগিয়ে যেতে পারি তাহলে জঙ্গি, সন্ত্রাস যেভাবে নির্মুল সম্ভব হয়েছে; তেমন মাদকও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।’