ঢাকা ১৮ জুন : প্রেসিডেন্টের স্ত্রী (ফার্স্ট লেডি) প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইতিহাস আছে কি? এই মুহূর্তে তা মনে পড়ছে না। তবে চলতি বছরের আগামী নভেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের জয়ের মাধ্যমে সেই ইতিহাসটা হাতে পারে, আর সেটার পর্যাপ্ত সম্ভাবনাও আছে।ডাক্তারের স্ত্রী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ায়ের স্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার, নায়কের স্ত্রী নায়িকা এমন ঘটনা নেহাত কম নয়।
কেননা একে তো রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুমাত্রিক বিতর্কে বিপর্যস্ত। তার ওপর নিজ দলের বড়-বড় বর্তমান ও সাবেক রাজনীতিবিদ এবং নেতাদের নেই পরিপূর্ণ সমর্থন। আর ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প নিয়ে দ্বিধা-বিভক্তি তো আছেই। তাই যেন-তেনভাবে দলীয় মনোনয়ন পেলেও জাতীয় মনোনয়ন নিয়ে সংশয় তো থেকেই যাচ্ছে।
সেই সঙ্গে ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত ও আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ায় গোটা দুনিয়ার সব ধর্মের সচেতন মানুষের কাছে সমর্থন বঞ্চিত হবেন তিনি। একাধিকবার অযৌক্তিকভাবে শুধু ব্যক্তিগত আক্রশে বিশ্ব মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের গালিগালাজ করেও কলঙ্কিত হয়েছেন ট্রাম্প।
খিটখিটে মেজাজ, ব্যবসার ডলারের গরম আর মানুষের সঙ্গে অমানবিক আচরণের প্রভাব তো কম নেই। তার র্যালি-সমাবেশে হামলা-সংঘর্ষ হতাহতের ঘটনাও আছে। স্রেফ অর্থের জোরে অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো অবস্থা ট্রাম্পের।
অন্যদিকে, ৩৬ বছর ধরে মার্কিন রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠা শান্ত, বিনীয়ী ও কৌশলি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি ও প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন জনসমথর্ন নিয়ে দাপটের সঙ্গেই মাঠে রয়েছেন। তার সঙ্গে আছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শুভেচ্ছা, আশীর্বাদ, সমর্থন ও নির্বাচনী প্রচারণায় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি।
নব্বইয়ের দশকে হিলারির স্বামী বিল ক্লিনটন ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙা ছিলো। বেকারত্বের হার কম ছিলো। ওই সময় বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মর্যাদা বেড়েছে। সেসব অর্জনের কথা মাথায় রেখে ভোটাররা হিলারির পাশে দাঁড়াতে পারেন।
প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বিল ক্লিনটনের হোয়াইট হাউজের কর্মী মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে তার কেলেঙ্কারি হিলারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে স্বভাবতই উসকানি দেবেন রিপাবলিকানরা। সেক্ষেত্রে হিলারির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি এবং আগামীতেও পড়বে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মায়ের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন একমাত্র মেয়ে চেলসি ক্লিনটন। সঙ্গে বাকপটু বিল ক্লিনটন যুক্ত হলে নির্বাচনে আর ঠেকায় কে? বিগত কয়েক মাস ধরে চলা দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত প্রাইমারিতে ডেমোক্র্যাটিক পার্থিতার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছেন হিলারির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি বলেছেন, ‘হিলারির সঙ্গে অনেক বিষয়ে আমি একমত নই, তবে ট্রাম্পকে ঠেকাতে আমরা অবশ্যই এক হয়ে কাজ করবো।’
অর্থাৎ ‘যেভাবেই হোক ট্রাম্পকে ঠেকাও’ এই নীতি অনুসরণ করেই চলবে ডেমোক্র্যাটদের অ্যাকশন। হিলারির পাশে বন্ধু হয়ে ট্রাম্পবিরোধী সেই অ্যাকশনে শামিল হবেন স্যান্ডার্স।
সব মিলে বলাই যেতে পারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটনই হতে যাচ্ছেন আগামীর মার্কিন প্রেসিডেন্ট! তবে নির্বাচনী ডামাডোল এবং ম্যাকানিজমের এই দুনিয়ায় তা নিশ্চিত করে না বলাই ভালো।
সর্বশেষ ওয়াশিংটন ডিসির প্রাইমারিতেও বিজয়ী হয়েছেন হিলারি। এর আগে গত ০৫ জুন পুয়ের্তো রিকোর অঙ্গরাজ্যের অনুষ্ঠিত প্রাইমারিতে বড় জয় পাওয়ার পরই মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার বিষয়ে খবর প্রকাশ হয়। ওইদিন হিলারি ক্লিনটন মোট ২ হাজার ৩৮৪ ডেলিগেটের সমর্থন পেয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
এরমধ্যে প্লেজড ডেলিগেটের সমর্থন ১ হাজার ৮১২ এবং সুপার ডেলিগেটের সমর্থন রয়েছে ৫৭২। মনোনীত হওয়ার জন্য তার দরকার ছিলো ২ হাজার ৩৮২ ডেলিগেটের সমর্থন। প্রয়োজনের চেয়ে একটি বেশি ডেলিগেটের সমর্থন পেয়ে তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে এখন শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার অপেক্ষা।
যুক্তরাষ্ট্রের ২৪০ বছরের ইতিহাসে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে হিলারি হচ্ছেন প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। সে দিক থেকে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে এক ঐতিহাসিক নির্বাচন বলেই মনে করা হচ্ছে।
২০০৮ সলে বারাক ওবামার সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন হিলারি। এবার স্যান্ডার্সকে পেছনে ফেলে মনোনয়ন পেয়েছেন নিউইয়র্কের সাবেক এই সিনেটর।
স্কুল জীবনের সাঁতার ও বেসবল প্রতিযোগিতা, স্টুডেন্ট কাউন্সিল, স্কাউটিং, গান গাওয়া আর পরিপক্ক জীবনের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, সবকিছু উজার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্নের হাতছানিতে নিশ্চয়ই হাতছাড়া করতে চাইবেন না ৬৯ বছর বয়সী সাবেক বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর নারী হিলারি ক্লিনটন।