বাংলাদেশের অর্থনীতি আগামী ১০ বছরের মধ্যে একটা সামষ্টিক চাপের ভিতরে ঢুকতে যাচ্ছে জুনে ২০১৯-২০ এর বাজেট যখন দেয়া হয় তখন পর্যালোচনা করে বলেছিলাম । তখন কেউ কেউ বলেছেন, এটাকে আমি অতিরঞ্জণ করছি কিনা বা অতিমাত্রায় নেতিবাচক করছি কিনা। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমি সত্য প্রমাণিত হয়েছি। দুমাস আগে সিপিডির কাছে আরও ৪টি বিষয় উপস্থাপন করে অর্থ বছরের গতি প্রকৃতির মূলায়ণ করেছি। প্রথমত:  রাজস্ব আদায়, দ্বিতীয়ত: ব্যাংকিং খাত পরিস্থিতি, তৃতীয়ত: পুঁজি বাজার ও চতুর্থত: বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অবস্থান, বিশেষ করে রপ্তানি খাতে বিগত সময়কালের ভিতরে সবচেয়ে নেতিবাচক পরিস্থিতি আমরা দেখছি।

সামগ্রিকভাবে বিচারে, ২০১৯ যেভাবে শুরু করেছিলাম কিন্তু আমরা শেষ করেছি দুর্বল ভিত্তির ওপরে। ২০১৯ বর্ষবছরটা ছিল নতুন সরকারের প্রথম বছর।

আমরা বলেছিলাম উদ্যমহীন, উচ্ছাসহীন, উৎসাহহীন ১০০দিন কেটেছে। প্রত্যাশা ছিল, বিগত সময়কালে যেসব পুঞ্জীভূত সমস্যা তা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার অত্যন্ত শক্তিশালী কিছু সংস্কার পদক্ষেপে যাবে। অর্থাৎ কর আদায় বাড়ানোর জন্য সংস্কার হবে; বিদেশে টাকা পাচার রোধ করা হবে; খেলাপি ঋণ আদায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ হবে। পুঁজিবাজারের ভিতরে যেসব ফটকাবাজি চলছে, যে ধরণের অপকর্ম চলছে সেগুলোকে আটকানো হবে। আমরা মনে করেছিলাম, কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবে এবং শ্রমিকদের মাসিক বেতন নির্ধারণ করা এবং তা সঠিকভাবে পরিপালন হবে। এর সঙ্গে কিছু আশা ছিল, সরকারের কিছু ভাল উদ্যোগ ছিল, যেমন সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষা বলয় থেকে বের হয়ে সব নাগরিকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তায় যাওয়া ইত্যাদি। দেশে মাত্র ২ শতাংশ শিক্ষায় আর মাত্র ১ শতাংশ স্বাস্থ্যে ব্যয় হয়। এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। গরিব মানুষের সামাজিক স্বাস্থ্য সেবা ও গুণগত মান সম্পন্ন শিক্ষা সেবা নিশ্চিত হবে। পরিতাপের বিষয় হলো, সরকারের যে এগুলো চিন্তায় ছিল না তা নয়, তারা নির্বাচনী ইশতেহারেও এগুলো বলেছে। কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়া পরিতাপের বিষয়।

সামগ্রিকভাবে বলতে হয়, এটা হলো রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কারণ। এই যে অর্থনৈতিক অপশাসনের যারা সুবিধাভোগী তারা অনেক বেশি ক্ষমতাধর। তারা রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকেও ব্যর্থ করে দিতে পারে এবং তারা ক্ষমতার অংশ হিসেবে রয়েছে। যার ফলে এরকম একটা পরিস্থিতিতে তারা আমাদের নিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের কাছে অনেকখানি জিম্মি হয়ে রয়েছে। নাগরিকদের কাছে জবাবদিহির জায়গাটা যেহেতু এই মুহুর্তে দুর্বল, একটা রাজনৈতিক শুন্যতা বিরাজ করছে, সেই কারণে তাদের মোকাবেলা করার জন্য কোন রাজনৈতিক শক্তি নেই। না থাকার কারণে যারা সংসদ সদস্য রয়েছেন তাদের ভোটদানকারীরা এর দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছেন, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সংসদে এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয় না, মন্ত্রী পরিষদে, স্থায়ী কমিটিতে এ বিষয়গুলো আলোচনা হয় না। এই যে অর্থনৈতিক সূচকগুলির কথা আমরা বলছি, এ সূচকগুলি আমরা দেখছি অথচ নীতিনির্ধারকরা কী দেখছেন না? নাকি তাদের কাছে এমন কিছু জাদুর কাঠি আছে যেগুলো সম্বন্ধে আমরা অবহিত না।

আমার মনে হয় একধরণের উপ্যাখ্যানের বিশ্বাসে আমরা চলে গেছি। কোন ধরণের ঋণাত্মক, নেতিবাচক, সমালোচনামূলক কথাকে আমরা গ্রহণ করতে চাই না। আমরা বুঝতে চাই না, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, স্বল্প আয়ের দেশে, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বল দেশে, যেখানে প্রতিদিনই শত সহস্র সমস্যা থাকবে। এগুলো স্বীকার করার ভিতরে কোন দুর্বলতা দেখি না। এগুলো অতিক্রম করার ভিতরেই আমি নেতৃত্ব দেখি। সেহেতু একটা অসহিষ্ণু মনোভাব নিয়ে এগুলোকে আমি আলোচনায় রাখব না এবং তার ফলে প্রশাসন রাজনৈতিক নেতৃত্ব আর এ সমস্ত বিষয়কে ধরতে চান না, কথা বলতে চান না। যার ফলে সমাধানও হয় না। আলোচনা করলে এগুলো পরিষ্কার হতো জিম্মি হয়ে থাকা ওই শক্তির পক্ষে। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে, ব্যাংকিং খাত সংস্কার। যে লোকগুলি টাকা ফেরৎ দিল না আপনি সেই লোকগুলিকে এমন সুযোগ দিলেন, যারা টাকা ফেরৎ দিচ্ছে তাদের থেকেও বেশি সুবিধা দিলেন। ব্যাংকিং খাত কি শুধুমাত্র সুদের ঋণ কমানোর মধ্যেই নিহিত?

আমি মনে করি, কু-রাজনৈতিক অর্থনীতি চলছে এটা তারই ফল। ব্যাংকিং খাতে অপব্যবস্থার ফলে যে সুবিধা তারা পেয়েছে, তারা বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক বলয়ে অত্যন্ত প্রভাবশালী। যেহেতু তারা প্রভাবশালী এবং যেহেতু তাদের সংযোগ পুঁজি আছে সেহেতু তারা এভাবে চলছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, তারা যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণমানুষের কাছে থাকার কথা, সেটা তারা দিচ্ছেন না। বিদায়ী বছরে নুতনত্ব হলো সরকার বাজার ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। আপনি বিজ্ঞানসম্মতভাবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় থাকেন না সেহেতু আপনি পিয়াজের মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন না, কৃষকের ন্যায্যমূল্য দিতে পারেন না, পুঁজির মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন না, মজুরি নির্ধারণ করতে পারেন না। এর ফলে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আর কার্যকর থাকছে না। যে প্রতিষ্ঠান দিয়ে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন তা কার্যকর থাকছে না। যে প্রতিষ্ঠান দিয়ে আপনি এটা করবেন, সেটা সেই প্রতিষ্ঠানকে অকেজো করলে কিসের ভিত্তিতে আপনি এটা করবেন?

আগের চেয়ে অনেক কম তথ্য আমরা পাই। বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিসংখ্যান ব্যুরো, অর্থ মন্ত্রণালয়তো বললামই না। ওনারা এক বছর পার হয়ে যায় হিসাব ঠিকমতো দেন না। এর কারণ কী? তারা তথ্য দিতে চান না কী, তাদের প্রতি বিরুপ মন্তব্য আসতে পারে সেই কারণে। যদি তথ্য উপাত্ত না থাকে অর্থনীতিতে, যদি সচ্ছতা না থাকে ভিত্তি ব্যতিরেকে সর্বদাই আপনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবেন। পিয়াজের সামান্য মূল্য আপনি ঠিক করতে পারছেন না, আপনি কিভাবে ঋণের মূল্য ঠিক করবেন? পুঁজির মূল্য ঠিক করবেন? মজুরি ঠিক করবেন? কৃষকের দাম ঠিক করবেন?

রেমিট্যান্সের পরিমাণ আগের মতো নেই। পুরো বিশ্ব একটা মন্দার ভিতরে যাচ্ছে। তেলের দাম সেভাবে যদি না বাড়ে, মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিঃসন্দেহে কম থাকবে। রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারে ২ টাকা প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে এ মুহুর্তে। ওখানে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে যাচ্ছে। তাহলে ওই টাকাটা অন্য কোন ব্যবহারক্রমে ছিল। টাকার মূল্যমাণকে আপনি প্রতিযোগিতামূলক না করে ওইখানে আপনি টাকা দিচ্ছেন। রেমিট্যান্সের ভিতরে করের টাকাও যাচ্ছে। আমি দেখছিনা বিজ্ঞানসম্মতভাবে চিন্তাভবনা করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চলছে।

চলতি বছরের কথা সূচকের ভিত্তিতে যদি বলি, এত প্রবৃদ্ধি পাওয়া গেল, তবে আয় গেল কোথায়? তাহলে কী আয় হয়নি? নাকি আগের থেকে কম কর আদায় হয়েছে? নাকি প্রশাসন আর কর আদায় করতে পারছে না। ২০২০ সালে প্রধান সমস্যা সরকারের সম্পদ সংগ্রহ। সরকার যদি রাজস্ব আদায় না বাড়াতে পারে, তাহলে তার যে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা সেজন্য অর্থ বরাদ্দ করতে পারবে না। পরিকল্পনা যদি চালিয়ে যেতে চায় তবে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে হবে। ঋণের জন্য যদি বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবস্থা করতে না পারে তবে ব্যাপকভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। কারণ সে আগের মতো সঞ্চয়পত্র বিক্রি করতে পারে না বা করতে চায় না। এটার সুদের জন্য আমার ঋণের বোঝা বাড়ছে। এ মুহুর্তে  যা তারল্য আছে তা যদি সরকার নিয়ে যায়, তাহলে ব্যক্তি বিনিয়োগ কি করে হবে? তাহলে কর আদায় যদি না হয় শুধু ব্যক্তি বিনিয়োগ আটকাবে না? এখন পর্যন্ত ব্যক্তি বিনিয়োগ ২৩ শতাংশে আটকে আছে গত ৪ বছর যাবৎ। প্রথমবারের মতো সরকারি ব্যয়ও কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাজেট ঘটাতি ৫ শতাংশের ওপর চলে গেছে এবার। অনেক বছর পর বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজেট ঘাটতি থাকলে তা টাকার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে, ঋণের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। ফলাফলে মূল্যস্ফীতি আসবে। এখন নজর দিতে হবে কর আদায় পরিস্থিতির ওপর।

নতুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রধান এসেছেন আমি তাকে অভিনন্দন জানাই। তিনি কী উদ্যোগ নেন এটা দেখার বিষয়। দৃশমাণভাবে বাংলাদেশে শতকোটির মালিক বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু কর আদায়ে নিম্নগামী। কর আদায় পরিস্থিতি ঠিক করার সঙ্গে সঙ্গে যদি পুঁজিবাজার এবং ব্যাংকিং খাতে কোন মৌলিক সুশাসনের সংস্কার না হয়, আবার যদি এটাতে করের টাকা এনে পুঁজি সঞ্চালনের চেষ্টা করা হয়ে দশদিনের জন্য এটাকে চাঙা করে আবার এটাকে পতন ঘটিয়ে কিছু লোক এটাকে ব্যবহার করে টাকা বের করে নিয়ে যাবে। কিছু তৃতীয় শ্রেণির কোম্পানিক নথিভুক্ত করে আবার কিছু স্বল্প সঞ্চয়ীকে প্রলুব্ধ করে আবার এখান থেকে টাকা নিয়ে বের হয়ে চলে যাবে। এইরকম পরিস্থিতি থেকে বের না করা হলে এই ব্যাংকিং এবং পুঁজিবাজার আগামী কয়েক মাস বিব্রত রাখবে। পঞ্চম মাস যাচ্ছে যেখানে আমাদের নেতিবাচক রপ্তানি, আমরা এখন আন্তর্জাাতিক চাপের মুখে আছি।

শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে, পরিসেবার দাম বাড়ছে।  ১০/১২টা কোম্পানি যদি বন্ধ হয় কয়েক হাজার লোক কর্মহীন হয় তাহলে কি অবস্থা হবে? আর একটা বিষয় কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস বলে, এক বছর যদি কৃষক দাম না পায় আরও বেশি উৎপাদন করে এবং সেটাতে কম উৎপাদন হয়, দাম বাড়ে ইত্যাদি। যদি কৃষক আবার ন্যায্যমূল্য না পায় তবে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে।
বিদেশি বিনিয়োগতো বাড়ছে না। ভিয়েতনাম আমার দেশের চেয়ে ছোট অর্থনীতির দেশ হয়ে ১২, ১৪ গুন বিনিয়োগ, মিয়ানমার ১০ গুন বিনিয়োগ পায়। যে দেশের নিজের বিনোয়োগকারীরা বিনিয়োগ করে না, সেদেশে বিদেশিরা বিনিয়োগ করবে কি করে? নিজের দেশের উদ্যোক্তারা আস্থার সঙ্কটে থাকে, সেদেশে বিদেশি উদ্যোক্তারা এসে সঙ্কট কাটিয়ে দেবে এটা অর্থনীতির ব্যকরণে নেই।

এমনিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা সহ্য শক্তি আছে। সরকারের ব্যবস্থাপনার জন্য নুন্যতম যে পুঁজি দরকার সেটা তো আমাদের দেশের আছে। আমার দেশতো আফ্রিকার যেনতেন দেশের মতো নয়। উন্নতি তো আমাদের হয়েছে। ভয়টা হচ্ছে, উন্নতিটা না আবার অব্যবস্থাপনার কারণে বানের জলে ভেসে যায়। আগামী অর্থবছর নতুন পঞ্চবার্ষিকীর পরিকল্পনার বছর আসছে। তথ্য উপাত্তের সঙ্গে না মিললে কি পরিস্থিতি দাঁড়াবে? রোহিঙ্গারা রয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের সমস্যা বহুবছর দীর্ঘস্থায়ী হবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে। তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক কতটুকু সুস্থ রাখতে হবে সেটা দেখার বিষয়। সেইসঙ্গে পুরো বিশ্ব একটা মন্দার ভিতর ঢুকছে। ২০২০ হচ্ছে একটা অধিবর্ষ। একটি দিন আমরা বেশি পাব। দেশের কাজে ওইদিনটি লাগাতে পারব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করব। জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশের বিকশমান অর্থনীতির সুষ্ঠু পরিস্থিতি আনিয়ে তো আমি ওনার কাছে পৌঁছাতে চাই। সেটা করার ক্ষেত্রে কতটুকু উৎসাহ, উদ্যোগ, উদ্যম আছে সেটা দেখার বিষয়। সমস্যাকে অস্বীকারের মধ্যে কোন সমাধান নেই। স্বীকার করেই সমাধান করা উচিত।

সূত্র: ২রা জানুয়ারি চ্যানেল আইতে মানবজমিন প্রধান সম্পদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রচারিত ‘আজকের সংবাদপত্র’ অনুষ্ঠানে বিদায়ী বছরের অর্থনীতি ও বর্তমান বছরের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মূল্যায়ণ

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031