ঢাকা ১৬ জুন: কার নির্দেশে এবং কেন এই হামলা হয়েছে তার অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে মাদারীপুরের পুলিশ।মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষককে হত্যা চেষ্টার সময় হাতেনাতে আটক যুবক ফাইজুল্লাহ ফাহিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। হামলার সময় তার সঙ্গে আর কারা ছিল,
কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলার সঙ্গে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে হাতেনাতে একজন আটক হওয়াকে বিরাট অগ্রগতি হিসেবে দেখছে পুলিশ। তার মাধ্যমেই রহস্যের জট খোলার বিষয়ে আশাবাদী তারা।
ফাইজুল্লাহ ফাহিমকে আটকের পর পর রাতে জিজ্ঞাসাবাদ করে মাদারীপুরের পুলিশ। তবে তিনি কী বলেছেন, সে বিষয়ে আপাতত কিছু জানাতে চাইছে না পুলিশ। তারা কেবল বলছে আহত কলেজ শিক্ষকের সঙ্গে তাদের কোনও ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল না।
ফাহিমের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তবে তারা ঢাকাতেই থাকেন। তার বাবা পোশাক কারখানায় উচ্চপদে চাকরি করেন। প্রতিষ্ঠিত এই পরিবারের ঘনিষ্ঠ অন্য স্বজনরাও সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে প্রতিষ্ঠিত। ফাহিম রাজধানীর উত্তরার একটি কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষা শেষ না করেই তিনি উধাও হয়ে যান। ফাহিমের বাবা গোলাম ফারুক এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।
ফাহিম কাদের সঙ্গে মিশতেন, কোনও সংগঠনে জড়িয়েছিল কি না, সে বিষয়ে স্বজনদের তেমন কোনও ধারণা নেই। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তার বাবা গোলাম ফারুক তার ছেলের এই ঘটনাকে দুঃখজনক বলেছেন। এরপর থেকে তিনি ফোন বন্ধ করে রেখেছেন।
ফাহিম আটক হওয়ায় গুপ্তহত্যা রহস্যের জট খোলার আশায় পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মাদারীপুর পুলিশের একটি সূত্র।
জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল মোর্শেদ এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। তিনি কেবল বলেন, ‘তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় আটক যুবককে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আর কারা কারা তার সঙ্গে জড়িত-তা জানার চেষ্টা চলছে’।
পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, ‘আটক ফাহিম শিবির বা অন্য কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কি না, সে বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে তার কাছ থেকেই তার পুরো চক্রের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার বিষয়ে আমরা আশাবাদী’।
গত বুধবার বিকালে মাদারীপুরের সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে তার বাসায় ঢুকে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। তার মাথায় ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ফাহিমকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে স্থানীয়রা। কিন্তু পালিয়ে যায় তার দুই সহযোগী।
শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনি বর্তমানে বরিশালের শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি রিপন স্থানীয় একটি আশ্রমে সেবায়েতের কাজ করতেন। সমাজসেবী হিসেবেও তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন।
সম্প্রতি এর আগে একই কায়দায় ঝিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী পাবনায় আশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পাণ্ডে, নাটোরে খ্রিষ্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজকে হত্যা করা হয়। চট্টগ্রামে খুন হয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু।
গত তিন বছর ধরেই অতর্কিত হামলা চালিয়ে বেশ কজন ভিনদেশী, লেখক, প্রকাশ, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বা ভিন্নমতাবলম্বীকে হত্যা করা হয়েছে। বেশ কিছু ঘটনায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস দায় স্বীকার করেছে। তবে সরকার বলছে, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।