পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জাল থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না । তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক যে অনুসন্ধান করছিল তা শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। শিগগির তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে জমা দেওয়া হবে।
আউয়ালের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য থাকতে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি, নিয়োগ-বাণিজ্য, অবৈধভাবে সেতু-ফেরিঘাট ইজারা দেওয়াসহ টেন্ডার-বাণিজ্যের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া তার স্ত্রী লায়লা ইরাদ (লায়লা পারভীন) এবং ছেলে আব্দুর রহমান, আব্দুর রহিম ও মেয়ে বুশরা আউয়ালসহ (অন্তরা) আত্মীয়-স্বজনের সম্পদের বিষয়েও দুদক অনুসন্ধান চালিয়েছে।
এর আগে তাকে একাধিকবার তলব করেছে দুদক। সর্বশেষ গত ৮ ডিসেম্বর তাকে ডেকে পাঠিয়েছিল দুদক। তবে তিনি দুদক কার্যালয়ে যাননি।
দুদকের একটি সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের জুন মাসে পিরোজপুর-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আউয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি অর্থ ও সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ জমা হয় দুদকে। পরে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়। চলতি বছরের ১৯ মে একেএমএ আউয়ালকে ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল ও হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ পাঠান দুদকের উপ-পরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-২) সৈয়দ আহমেদ। ওই নোটিশে তাকে দুদক প্রধান কার্যালয়ে ২৩ মে হাজির হতে বলা হয়।
সূত্র জানায়, প্রথম দফায় হাজির না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় গত ১৯ জুন আবার আউয়ালকে নোটিশ পাঠিয়ে ২৭ জুন তাকে দুদক প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। দ্বিতীয় দফা নোটিশে দুদকে হাজির হন এ কে এম এ আউয়াল।
আউয়ালের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রথমে নিয়োগ পান দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ আহমেদ। পরে তিনি অবসরে গেলে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান দুদকের উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর।
দুদকের একটি সূত্র জানায়, সাবেক সংসদ সদস্য আউয়াল দুদকে গিয়ে বক্তব্য দিলেও সার্বিকভাবে দুদককে খুব বেশি সহযোগিতা করেননি তিনি। পরে গত ২৪ অক্টোবর পিরোজপুর উপকর কমিশনারের কার্যালয়ে (সার্কেল-৬) এ কে এম এ আউয়ালের হালনাগাদ আয়কর রিটার্নের তথ্য চেয়ে দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিটি পাঠান নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর। পরে ১১ নভেম্বরের মধ্যে হালনাগাদ রিটার্নের তথ্য দুদকে পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি। একই দিনে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিবের কাছেও চিঠি পাঠায় দুদক। ওই চিঠিতে বলা হয়- ‘সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় নির্বাচনী হলফনামার সাথে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করেছেন। অনুসন্ধানের স্বার্থে ওই সম্পদ বিবরণীর সত্যায়িত ফটোকপি ৪ নভেম্বরের মধ্যে দুদকে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়।’
দুদক জানায়, গত ২৪ অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি পাঠিয়ে আউয়ালের সম্পদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। দুদকের একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানে নেমে আউয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
পিরোজপুর-১ আসন থেকে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুবার আওয়ামী লীগের টিকিটে সাংসদ হন আউয়াল। তবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। তার জায়গায় দলের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।