কবিতা খানম নির্বাচন কমিশনার বলেন , একটিমাত্র আসনে নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের নজর থাকবে এই নির্বাচনে। নির্বাচন সাকসেসফুল করতে না পারলে আমাদের বড় ব্যর্থতা। নির্বাচনে কোন অনিয়ম মেনে নেবে না নির্বাচন কমিশন। আশা করছি, সবার সমন্বিত চেষ্টায় শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষা একটি মডেল নির্বাচন উপহার দিতে পারবো। চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসনের নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায়

এসব কথা বলেন তিনি। গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন জেলা পুলিশ সুপার নূরেআলম মিনা, বিজিবি চট্টগ্রাম ব্যাটেনিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল মো. মুনির হাসান, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, এন এস আইয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. শরীফ উল হাসান, পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ, ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম, র‌্যাব-৭ এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাহমুদুল হাসান মামুন, ডিজিএফআইয়ের ডিএডি মো. আতিকুর রহমান খন্দকার, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান, সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. শফিকুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জর সিএমপি’র (ডিসি-নর্থ) বিজয় বসাক, এডিএম এ জেড এম শরীফ হোসেন, আনসার ও ভিডিপির পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কমিশনার মো. কামরুল আলম প্রমুখ।

সভায় বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সব বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান।
পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বলেন, ‘বোয়ালখালী কোন পুলিশ নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবে না। অন্য থানার পুলিশ ভোটের দায়িত্ব পালন করবে। বোয়ালখালীর ওসি শুধু মনিটরিং করবে।’ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন হলে এক কেন্দ্রে অফিসরসহ ১০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সকল প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, উপ-নির্বাচন হলেও জাতীয় নির্বাচনের আমেজ রয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সুনাম অক্ষুণœ রাখার চেষ্টা থাকবে প্রশাসনের।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইভিএমে কোন ভয় নেই। এখানে কোন নেটওয়ার্কিং নেই। এক জায়গা ভোট দিলে আরেক জায়গায় চলে যাওয়ার সুযোগ নেই। শুধু মানুষের আস্থার জায়গা সৃষ্টি করতে হবে।
উপজেলা নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘তখন দেখেছি, বোয়ালখালী একটি অস্থির অবস্থা। আরেক জন আরেক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেই চলছিল। তখন থেকে বোয়ালখালী নিয়ে আমি সন্দিহান ছিলাম। এটা হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন, বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা ছিলেন, তারা এখনো আছেন। আশা করছি, নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবো।’

ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ম্যানুয়েল পদ্ধতির চেয়ে অনেকেই ইভিএমকে ভয় পায়। অনেকেই মনে করে ইভিএমে এক জায়গা ভোট দিলে আরেক জায়গায় চলে যায়। এমন সন্দিহান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ব্যালট বক্স ছিনতাই করে চলে যাওয়া যায়। কিন্তু ইভিএম সেই সুযোগ দেয় না। ইভিএম ভোট শুরু হওয়ার আগে কেউ ওপেন করতে পারবে না। এমনকি যন্ত্রটি নিয়ে গেলেও তা ওপেন করতে পারবে না। ইচ্ছে মতো ভোট দেবে তা করতে পারবে না। একমাত্র ভোটার ছাড়া কেউ ওপেন করতে পারবে না। ফেলে দেওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারবে না। এছাড়া ভুল প্রতীকে ভোট দিলে তা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। তবে দ্বিতীয়বার ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। এখানে ভয় আর আতঙ্কের কিছুই নেই।

জনগণের আস্থা অর্জনে মক ভোটিংয়ের আয়োজন করা হলেও ভোটাররা আসে না। জনগণের আস্থা ফিরাতে মসজিদ, মন্দির, বস্তিতে ইভিএম নিয়ে যেতে হবে। মানুষের আশঙ্কা, সন্দেহ যেন কেটে যায়।
নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রাণহানির মতো ঘটনা চায় না। এজন্য ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর প্রতি আলাদা নজর দেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। প্রয়োজনে বাড়তি পুলিশ প্রশাসন মোতায়েনের জন্য জেলা পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেন।
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। তারা কেন আসেনি। বিষয়টি ডিসি ও এসপিকে কেন জানানো হয়নি তাও জানতে চেয়েছেন বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে।’ তিনি বলেন, ‘এই সভায় তাদের উপস্থিতি জরুরি ছিল। তাদের মতামত এখন আর জানতে পারলাম না।’

নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। আমেজ থাকবে। কিন্তু সেটা যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়। ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্র গিয়ে ভোট দিয়ে নিরাপদে ফিরতে পারে-সেটা নিশ্চিত করবে কমিশন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষভাবে দেখলে মনে হয় না কোন ধরনের সমস্যা হতে পারে।

নির্বাচনে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলেই কমিশনের উপর আঙ্গুল তোলা হয়। এটা খারাপ লাগে। একটিমাত্র আসনে নির্বাচন, কোন ধরনের অনিয়ম নির্বাচন কমিশন এলাও করবে না। এই নির্বাচন সাকসেসফুল করতে না পারলে আমাদের বড় ব্যর্থতা।
চট্টগ্রামে সবার মধ্যে একটি ভালো সমন্বয় আছে। নির্বাচনকালীন যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোন ধরনের অবনতি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সবার সমন্বিত প্রয়াসে বিশৃঙ্খলামুক্ত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষা একটি মডেল নির্বাচন উপহার দিতে পারবো বলে আশা করছি।
চট্টগ্রামে উপজেলাসহ অন্যান্য নির্বাচন ভালো হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিযোগিতা থাকবে। এখানে একাধিক দল অংশ নিচ্ছে। নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জিং। প্রতিটি নির্বাচনই চ্যালেঞ্জিং। এটা ইউনিয়ন পরিষদ হোক বা পৌরসভার হোক। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কাজ করাই সফল আসে। এজন্য সবকিছুর উর্ধ্বে আবেগহীন কর্মের উদ্দীপনামূলক নির্বাচন করতে চায়।

নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিব্রত অবস্থায় আছি। কমিশনের একটি টিম তদন্ত করছে। আরেক টিম তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম আসবে। বিষয়টি বিশেষ নজরে রয়েছে।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031