বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চারকন্যা বৃটেনের জাতীয় নির্বাচনে আবারো বিজয়ী হয়েছেন। তারা হলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক, সিলেটের রুশনারা আলী, আফসানা বেগম ও পাবনার রূপা হক। এর মধ্যে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে রূপা হক। এ নিয়ে সেখান থেকে টানা তিন বার জিতলেন তিনি। বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন রুশনারা আলী। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো জয়ের মুখ দেখলেন তিনি। পপলার অ্যান্ড লাইমহাউজ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন আফসানা বেগম।
টিউলিপ সিদ্দিক
হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন থেকে টিউলিপ সিদ্দিক প্রথম ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচনে তার আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন। গতকাল ফের সেখান থেকে জয়ের মুখ দেখেছেন তিনি। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি চ্যালটন স্ট্রিটে সোমারস টাউন স্পোর্টস সেন্টারে স্থাপিত মঞ্চে সমর্থকদের অভিনন্দন জানান। এ সময় টিউলিপ বলেন, আমরা এই আসনে বিজয়ী হয়েছি। কিন্তু দেশজুড়ে আমরা ভালো করিনি। আমাদের নতুন করে আস্থা গড়ে তোলা উচিত। এই দেশে (বৃটেনে) প্রয়োজন একটি লেবার দলীয় সরকার। উল্লেখ্য, এই আসনে ২৮ হাজার ৮০ ভোট পেয়েছেন টিউলিপ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী জনি লুক পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮৯২ ভোট। লিবারেল ডেমোক্রেটস দলের প্রার্থী ম্যাট স্যান্ডার্স ১৩ হাজার ১২১ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
রূপা হকের হ্যাটট্রিক জয়
এবারের নির্বাচনে বাজিমাত করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা হক। রাজধানী লন্ডনের ইনলিং সেন্ট্রালের একটি আসন থেকে এ নিয়ে টানা তিনবার জয় পেয়েছেন তিনি। ২৮ হাজার ১৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন এই লেবার পার্টি প্রার্থী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভের জুলিয়ান গ্যালেন্ট পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮৩২ ভোট। ১৯৭০ সা?লে তার পিতা মোহাম্মদ হক ও মা রওশন আরা হক বৃটেনে পাড়ি জমান। তাদের তিন মেয়ের মধ্যে সবার বড় রূপা হক। মোহাম্মদ হকের বাড়ি পাবনা শহরের কুঠিপাড়ায়। রূপার ছোট?বোন কোনি হক (কনক আশা হক) বৃ?টে?নের খ্যাতিমান টে?লি?ভিশন উপস্থা?পিকা ও লেখিকা। রূপা হকের বয়স ৪৭ বছর। তিনি রাজনীতিতে আসার আগে লন্ডনে অবস্থিত কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। পড়াতেন সমাজবিজ্ঞান। সেখানে সর্বশেষ জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন এই কলামিস্ট ও লেখক। নিজ নির্বাচনী এলাকার ভেত?রে ও বাইরে রূপা হক খুব জনপ্রিয় হলেও একদমই সাধারণ জীবনযাপন করেন। তার চলাফেরা ও বিনয়ী আচরণের জন্যও তিনি বেশ জনপ্রিয়। জাতীয় ইস্যু ও লেবার পার্টির অভ্যন্তরের রাজনীতিতে বরাবরই তাকে সরাস?রি পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। সংসদে নানা ইস্যুতে ঝড় তুলে আ?লোচনার কেন্দ্রে উঠে আসেন রূপা। ২০১৮ সা?লে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বোরকা নিয়ে করা তির্যক মন্তব্যের জন্য নিজের কলামে বরিস জনসনকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
রুশনারার চতুর্থ জয়
বৃটেনে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন রুশনারা আলী। এরপর থেকে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। এবার নিয়ে চতুর্থবারের মতো পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে জয়ী হয়েছেন এই লেবার নেত্রী। ৪৪ হাজার ৫২ ভোট পেয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন তিনি।
২০১০ সাল থেকে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে টানা তিনবার লেবার প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রুশনারা আলী। এরপর ২০১৫ সালের নির্বাচনেও বিপুল ব্যবধানে নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৭ সালের নির্বাচনেও ভোট ব্যবধান বাড়ে। ওই নির্বাচনে রুশনারা একই আসন থেকে তিনি ৪২ হাজার ৯৬৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন।
৪৪ বছর বয়সী এ রাজনীতিকের জন্ম সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ভুরকি গ্রামে। ছোটবেলায় মা-বাবার সঙ্গে লন্ডনে যান।
আফসানার উত্থান
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ আফসানা বেগম। বাংলাদেশে আদি ঠিকানা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। প্রথমবারের বিরোধী দল লেবারের প্রার্থী হয়ে পার্লামেন্ট নির্বাচন করেন। অনেকটা রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের মতো প্রথমবারই জয়ী হিসেবে আবির্ভূত হলেন। পূর্ব লন্ডনের পপলার অ্যান্ড লাইমহাউজ আসন থেকে ৩৮ হাজার ৬৬০ ভোট নিয়ে জয়ী হয়েছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী শন ওক পেয়েছেন ৯ হাজার ৭৫৬ ভোট। তার নির্বাচনী এলাকা অ্যান্ড লাইমহাউজ পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকা। এটি লেবার দলের শক্ত ঘাঁটি। এ আসনে প্রায় দুই দশক এমপি ছিলেন লেবার দলের জিম ফিটজপেট্রিক। কিন্তু রাজনীতি থেকে তিনি অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন এ বছরের শুরুতে। তার স্থানে উঠে আসেন আফসানা বেগম। অনেকটা চমক জাগিয়ে লেবার দলের মনোনয়ন কেড়ে নেন রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত তরুণ বাঙালি কন্যা আফসানা বেগম। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের আবাসন বিভাগে কর্মরত আফসানা বেগম লেবার পার্টির টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার সহসভাপতি। তিনি লেবার দলের লন্ডন রিজিয়ন শাখার সদস্য। আফসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসেই।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031