সবই তো আমরা জানি। ‘বরাদ্দাকৃত প্রকল্পের কাজ ২০/৩০ ভাগ হলেও ওই প্রকল্প কাগজপত্র শেষ দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আপনার পছন্দের ঠিকাদারদের ২০ শতাংশ ঘুষের বিনিময়ে কাজ দিয়েছেন। রিপোর্ট বন্ধ করতে চাইলে আমার বিকাশ অ্যাকাউন্টে ৪০ হাজার টাকা পাঠান।’ উপজেলা পর্যায়ের একজন প্রকৌশলীকে এভাবে হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। আর এই প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা হয় দৈনিক আমাদের সময়ের সংবাদকর্মীর ভুয়া পরিচয়। তবে চক্রটির শেষ রক্ষা হয়নি। আমাদের সময়ের আইনি পদক্ষেপের ভিত্তিতে ফাঁদ পেতে চক্রের মূল হোতাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাদ দিয়ে ডিবি জানিয়েছে, তারা প্রায় দুই বছর ধরে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন। মাদক আসক্ত ওই দুই প্রতারক প্রতিদিনই কোন না কোন কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে বিকাশ নাম্বার দিয়ে টাকা চাইতেন।
তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে।
আজ সকালে রাজধানীর শ্যামপুর থানার পোস্তগোলা এলাকা থেকে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পশ্চিম বিভাগের একটি দল। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- প্রতারক দলের মূলহোতা মো. শিবলু (৪০) ও তার সহযোগী মো. সোহাগ (৩০)।শুক্রবার তাদের দুজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চাল থানায় আমাদের সময়ের মানব সম্পদ বিভাগের (এইচআর) কর্মকর্তা এ. বি. এম. সিদ্দীক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। গতকাল বিকালে তাদের দুজনকে তিনদিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়। শুনানী শেষে আদালত তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজহারে বলা হয়, গত ৫ আগষ্ট থেকে দৈনিক আমাদের সময়ের পরিচয় দিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে শিবলু ও সোহাগ। তারা নিজেদের কখনো অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক; কখনো বার্তা সম্পাদক পরিচয় দিয়ে এই প্রতারণা করে আসছিলেন। প্রকৌশলী, খাদ্য বিভাগের কমকর্তা, যুদ্ম সচিব, উপ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা, পনি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ সামরিক-বেসামরিক বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই প্রতারণা করে আসছিলেন তারা। এতে আমাদের সময়ের সুনাম ও মর্যাদা নষ্ট হচ্ছে বলে এজহারে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ ওঠার পরপরই গত ২০ আগষ্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে আমাদের সময় কর্তৃপক্ষ।
ডিবি পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত দুই প্রতারকের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন ও সিম উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া কিছু চিরকুট জব্দ করা হয়েছে। কোন কর্মকর্তাকে ফোন করে কি বলা হবে সেসব জব্দকৃত চিরকুটে লেখা রয়েছে। এছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশেনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের একটি তালিকাও তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত এমন শতাধিক ঘটনার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন দুই প্রতারক। প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা দিয়ে প্রতিদিন ৫/৬ বার হেরোইন সেবন করতেন তারা। বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের নাম্বার সংগ্রহ করতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ডিবি পশ্চিমের উপকমিশনার (ডিসি) মোখলেসুর রহমান বলেন, তাদের দুজনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি।