চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ‘মশকমুক্ত পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী’ বিনির্মাণে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে । মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং শহরের ৪৪ কিলোমিটার সড়ককে ঘিরে সবুজায়নও এ পরিকল্পনায় রয়েছে। আসন্ন মুজিব বর্ষকে (২০২০) সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচির আওতায় ‘স্বল্পমেয়াদী’ (তিন মাস ব্যাপী), ‘মধ্যমেয়াদী’ (বছরব্যাপী) ও ‘দীর্ঘময়াদী’ (চলমান) চসিক পরিকল্পনাগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণীত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আজ রোববার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতিটি ওয়ার্ডকে চারটি জোনে ভাগ করা হবে। প্রতিটি ভাগে পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন রাস্তা, ফুটপাত, গলি, উপ-গলি, নালা-নর্দমা ‘যথাযথভাবে’ পরিষ্কার করা হবে। এছাড়া মশা নিধনে স্প্রে করার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ করা হবে। যেখান থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে সপ্তাহ শেষে পুনরায় একই স্থান থেকে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম শুরু করা হবে।
জানা গেছে, মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ কার্যক্রম দ্রুত শুরুর জন্য অনুশাসনও প্রদান করেছেন তিনি। পাশাপাশি একটি ধারণাপত্রও তৈরি করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ ধারণাপত্রকে প্রাথমিক ভিত্তি ধরে সমন্বিত ও সময়াবদ্ধ বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক অবহিত করার জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি। এর প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামসহ দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশন, ৪৯৪টি উপজেলা, ৬১টি জেলা পরিষদ, ৩টি পার্বত্য জেলা পরিষদকে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশনা দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত ২৭ নভেম্বর চসিক তাদের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রণীত কর্মসূচির উদ্দেশ্যগুলোর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দৈনন্দিন অভ্যাস গড়ে তোলা ও জনসাধারণকে এ বিষয়ে সচেতন করা’। এর আলোকে চসিকের প্রণীত কর্মপরিকল্পনায় ওয়ার্ডে অবস্থিত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, অফিস, শপিং কমপ্লেঙে প্রতি সপ্তাহে বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ পরিচালনা করবে। এইক্ষেত্রে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের তদারকীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সম্পৃক্ত করা হবে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ধারণাপত্রে ‘পরিবারভিত্তিক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে’ জোর দেয়া হয়েছে। এর আলোকে চসিকও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিমাসে দুইবার ক্যাম্পেইন করবে। প্রচারণায় পরিবেশের জন্য হুমকিকর প্লাস্টিক ব্যবহার না করে জৈব পচনশীল বর্জ্য ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহিত করবে। এছাড়া সম্মিলিতভাবে যার যার অবস্থানে থেকে নগরীরকে পরিচ্ছন্ন রাখা এবং গৃহস্থলী বর্র্জ্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার বিষয়ে প্রচারপত্র বিলি করবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের লক্ষে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়িতে বর্জ্যকে পৃথকভাবে অর্থাৎ ভেজা ও শুকনা বর্জ্য আলাদা করে রাখে সে ব্যাপারেও প্রচারণা চালানো হবে।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ‘ইনসিরেশন’ (বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা) পদ্ধতিতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, আধুনিক আবর্জনাগার বা স্যনিটারি ল্যান্ডফিল স্থাপন এবং নিজস্ব মালী দ্বারা নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে বনায়ন ও সবুজায়ন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয় কর্মপরিকল্পনায়।
কর্মপরিকল্পনা প্রসঙ্গে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমাদের কর্মপরিকল্পনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি রয়েছে। ‘ইনসিরেশন প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করবো। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে আলাপ-আলোচনাও চলছে। মেয়র বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার সময় এক হাজার ৩৫০টি ডাস্টবিন ছিল। সেগুলো কমিয়ে এখন তা ৫৭৫টি হয়েছে। এইক্ষেত্রে আমরা চাচ্ছি, বাসা-বাড়ি থেকে সংগৃহীত ময়লা সরাসরি ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ময়লাগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৩টি ‘কমপ্টেকার ট্রাক’ আছে। আরো ৬০/৭০টি হলে ডাস্টবিনের সংখ্যা আরো কমিয়ে আনা যাবে। এ বিষয়টিও আমাদের পরিকল্পনায় আছে। এছাড়া আধনিক আর্বজনাগার তৈরিরও পরিকল্পনা আছে। মেয়র বলেন, কর্মসূচি বাস্তবায়নে নির্দেশনা আছে প্রত্যেকটা পরিবারকে সম্পৃক্ত করা। অর্থাৎ প্রত্যেক পরিবারই যদি পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে জোর দেন তাহলে শহরটা অপরিচ্ছন্ন থাকবে না। আমরা যদি প্রত্যেকেই যেখানে-সেখানে ময়লা-আর্বজনা না ফেলি এবং সচেতন হয় তাহলে অবশ্যই শহরটা পরিচ্ছন্ন হবে।’
চসিকের সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সরকারের নির্দেশনা আছে পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর কার্যক্রম বাস্তবায়নে। এর আলোকে আমরা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণও করেছি। আগামীকাল (আজ) কর্মপরিকল্পনাগুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হবে।’
সবুজায়ন : প্রণীত কর্মপরিকল্পনায় দেখা গেছে, সাড়ে ৪৪ কিলোমিটার সড়কের ফুটপাত, গোলচত্বর ও মিড আইল্যান্ডে সৌন্দর্যবর্ধণ ও সবুজায়ন করা হবে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনায় তিন মাসের মধ্যে ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক এবং মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনায় এক বছরে আরো ২১ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ককে ঘিরে এ সবুজায়ন করার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
সবুজায়নের পরিকল্পনায় থাকা সড়কগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ইস্পানি মোড় থেকে টাইগারপাস, আলকরণ মোড় থেকে নিউমার্কেট মোড় হয়ে পুরাতন রেলস্টেশন গেট, নিউমার্কেট মোড় থেকে আমতলী শাহ আমানত মার্কেট, কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে লাভলেন হয়ে জুুবিলী রোড পর্যন্ত, প্রবর্তক মোড় থেকে গোলপাহাড়, আগ্রাবাদ হোটেলের সামনে থেকে এইচ.আর.সি ভবন এর পূর্ব এবং উত্তর পূর্বপাশের ফুটপাত, ফ’স লেক এপ্রোচ সড়ক, আন্দরকিল্লাহ থেকে লালদীঘির উত্তর কোণ, কোতোয়ালী মোড় থেকে ফিরিঙ্গিবাজারসহ নতুন ব্রিজ, জিইসি মোড়ের ওয়েল ফুড থেকে গোল পাহাড়, বাদামতলী মোড় থেকে জনতা ব্যাংকের মোড়, ২নং গেট থেকে জিইসি মোড় হয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অফিস গেট এবং গরীবউল্লাহ শাহ মাজার হয়ে লালখান বাজার ইস্পাহানী মোড়, শুলকবহর আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের পূর্বে গোল চত্বর থেকে বহাদ্দারহাট পর্যন্ত, ঈদগাহ কাঁচা রাস্তা থেকে অলংকার মোড়, ডিটি রোড দেওয়ান হাট থেকে কাঁচা রাস্তার মোড় পর্যন্ত।