মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্র বাড়াতে চায় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এবং বার্মিজ-ভাষা শিক্ষাসহ, যৌথ মহড়া ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের মতো বিষয়গুলোতে আরও গভীর সহযোগিতার কথা বিবেচনা করছে তারা।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ঢাকাতে সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “মিয়ানমারের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য আমি সেখানে সফরে যাবো। সফরের প্রধান উদ্দেশ্য হলো দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো, এবং সম্ভব হলে প্রশিক্ষণ বিনিময় করা”।

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দ্য ইরাবতীকে বলেছেন যে, জেনারেল আজিজ যে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিবেন, সেই দলটি ঠিক করা হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর থেকে এক সপ্তাহের ওই সফর শুরু হবে।

বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন যে, প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে যৌথ মহড়া এবং প্রশিক্ষণ বিনিময়ের ব্যাপারে চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। সেই সাথে স্টাফ পর্যায়ে বৈঠক, তথ্য বিনিময় ও বার্মিজ ভাষা শিক্ষার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আমাদের সম্পর্ক উপভোগ করি, কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো মিয়ানমার ২০১৬ সালে আমাদের এনডিসিতে (ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ) কর্মকর্তাদের পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। তাই পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চাই আমরা”।

জেনারেল আজিজ বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হলো দুই সেনাবাহিনীকে কাছাকাছি নিয়ে আসা এবং এমন সুযোগ তৈরি করা যাতে আমরা বিভিন্ন পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করতে পারি”।

তিনি বলেন যে, তিনি সম্প্রতি চীন সফর করেছেন এবং চীনের সামরিক নেতৃবৃন্দের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন যে, ‘নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে’ কিভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কট একটা আঞ্চলিক হুমকি তৈরি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন যে, বাংলাদেশ এখন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর চারদিকে বেড়া দেয়ার কাজ করছে।

বেড়া নির্মাণের বিরোধিতা করেছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং এ জন্য সেনাবাহিনী কিভাবে সমালোচনার হাত থেকে রক্ষা পাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন যে, সরকারই শরণার্থীদেরকে আশ্রয় দিয়েছে।

“এখন তাদের এবং স্থানীয় মানুষদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো”।

২০১৪ সালে বিভিন্ন জায়গায় সীমান্তে সঙ্ঘাতের পর জেনারেল আজিজ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের চেষ্টা করেছিলেন। সে সময় তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ডিরেক্টর জেনারেল ছিলেন। ওই বছরের জুনে তিনি নেপিদো সফর করেন এবং মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন।

‘সেনাপ্রধানের মিয়ানমার সফরে দেশের মঙ্গল হবে’

এদিকে আজ বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের মিয়ানমার সফর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে দেশের জন্য ‘মঙ্গল হবে’ এবং দুদেশের মধ্যে ‘আলোচনার অরেকটি পথ খুলে দিবে’।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটি (সফর) আমাদের পক্ষে যাবে। এটি আমাদের জন্য মঙ্গল নিয়ে আসবে।’

মিয়ানমারকে ‘বন্ধু প্রতীম দেশ’ আখ্যায়িত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সমঝোতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চাই।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031