ঈসা খান। বাংলার প্রাচীন ইতিহাসে বারো ভূঁইয়াদের নেতা। ১৫২৯ সালে জন্ম এই বীরের মৃত্যু ১৫৯৯ সালে। মূলত ছিলেন ভাটি অঞ্চলের শাসক। সেই লৌহমানব ঈসা খান অপূর্ব সুন্দরী সোনামনির প্রেমে পড়েছিলেন। অকালে বৈধব্যের শিকার সোনামনিকে হরণ করে বিয়ের আগেই ঈসা খানের কোষা ডুবেছিল নদীজলে। সেই জায়গাটিই এখনকার পাকুন্দিয়ার কোষাকান্দা নামে পরিচিত।

ঈসা খানের পিতামহ বাইশ রাজপুত সম্প্রদায়ভুক্ত ভগীরথ প্রথমে অযোধ্যা থেকে বাংলায় আসেন। পরে বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদের অধীনে দেওয়ান হিসেবে চাকরি পান। মৃত্যুর পর তারই পুত্র কালিদাস গজদানী পিতার পদে অভিষিক্ত হন। তবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তিনি নাম নেন সোলায়মান। সুলতানের কন্যা সৈয়দা মোমেনা খাতুনকে বিয়ে করেন সোলায়মান এবং সরাইলের জমিদারি লাভ করেন। তারই পুত্র ঈসা খান।

জানা যায়, এই ঈসা খানের স্মৃতি বিজড়িত কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় কোষাকান্দা। উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। কোষা অর্থ নৌকা। ঈসা খানের নৌকা ডুবেছিল বলেই এমন নামকরণ।

ইতিহাসে পাওয়া  যায়, শ্রীপুরের রাজা কেদার রায় ও চাঁদ রায়ের ছোট বোন ছিলেন সোনামণি। অপূর্ব সুন্দরী এই নারী অল্প বয়সেই বিধবা হন। এগারসিন্দুরের রণাঙ্গণে মল্লযুদ্ধে পরাজিত হয়ে সেনাপতি মানসিংহকে পরাজিত করতে পারার পুরস্কার হিসেবে ২২ পরগণার জমিদারি প্রাপ্ত হন ঈসা খান। জমিদারির সনদ নিয়ে নদী পথে বর্তমান করিমগঞ্জ উপজেলার জঙ্গলবাড়ীতে ফেরার পথে শ্রীপুরের কীর্তিনালা নদীর ঘাটে সোনামণিকে দেখে মুগ্ধ হন ঈসা খান। শ্রীপুর ঘাটে তার কোষা অর্থাৎ নৌকা নিয়ে রাতে অবস্থান করেন এবং প্রভাত হওয়ার পূর্বেই কেদার রায়ের রাজবাড়ী থেকে সোনামনিকে হরণ করে শ্রীপুর ত্যাগ করেন।

কোষার বহর নিয়ে প্রথমে ঢাকায় যান এবং সোনামনিকে বিয়ে করার জন্য সেখান থেকে পান, সুপারি, মিষ্টি উপঢৌকন ইত্যাদি ক্রয় করে অন্য একটি কোষায় ভরে জঙ্গলবাড়ীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সেই কোষার বহর শীতলক্ষ্যা ও ব্র‏হ্মপুত্র  নদ হয়ে এগারসিন্দুর পৌঁছায়। তৎকালে ব্র‏হ্মপুত্র নদের একটি শাখা নদী মির্জাপুর হয়ে জঙ্গলবাড়ীর দিকে প্রবহমান ছিল।

কোষার বহর এগারসিন্দুর ছাড়ার পরে ঈসা খান তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন এবং স্বপ্নে কেউ একজন তাকে বলেন, ‘হে ঈসা তুমি আমার বোন ঝি সোনামনিকে আগামীকাল বিয়ে করবে, আর সবাইকে মিষ্টি মুখ করানোর জন্য ঢাকা থেকে মিষ্টিও এনেছ। তবে আমাকেও সামনের কুঁড়ে মিষ্টি দিয়ে যেও।’

এক পর্যায়ে তন্দ্রা ছুটে যায় ঈসা খানের। তার কোষার বহর ব্র‏‏হ্মপুত্র নদের মোহনা পার হবার সময় বিয়ে উপলক্ষে কেনা পান, সুপারি, মিষ্টি ভর্তি কোষাটি নদীর গভীর জলে ডুবে যায়। ঈসা খান তার বহরে থাকা অনেক শিকল ও ডুবুরি ব্যবহার করেও আর কোষাটিকে উদ্ধার করতে পারেননি। ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে তার চলে যাওয়ার দীর্ঘকাল পর চলমান নদীটি কালের আবর্তে বিলীন হয়ে চর এলাকায় পরিণত হতে থাকলে হঠাৎ এক দিন মাটির নিচ থেকে কোষা আকৃতির একটি মাটির টিলা উঠে আসে।

সেই থেকে স্থানীয়দের কাছে প্রচলিত, এ কোষার দুই মাথায় গজে ওঠা তাল গাছ দুটি পাতায় প্রতি মাসের পূর্ণিমার রাতে আলোর ঝলকানি দেখা যায়। আর এসব গাথা নিয়ে এখনও ঠাঁয় রয়েছে কোষাকান্দা। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কিশোরগঞ্জগামী যেকোনো বাসে উঠে পাকুন্দিয়া হয়ে কোষাকান্দা যাওয়া যায়।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031