আজ বুধবার তিন বছর আগে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার আলোচিত মামলার রায় হবে । বিচার শুরুর এক বছর পূর্ণ হওয়ার মুখে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এই রায় ঘোষণা করবেন। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের ওই রেস্তোরাঁয় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে গলাকেটে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে নব্য জেএমবির জঙ্গিরা। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
পরে কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়েন। তারা হলেন রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
এ ছাড়া এ মামলায় আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আটজন হলেন তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
রায়ে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম সারোয়ার খান (জাকির) আসামিদের একটি ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং কয়েকটি ধারায় যাবজ্জীবন সাজা প্রত্যাশা করছেন।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মাদ দেলোয়ার হোসেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে পারেন নাই মর্মে খালাস পাবেন বলে আশা করছেন।
এ রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনো নাশকতার বিষয়ে পুলিশ ‘সর্বোচ্চ সর্তক’ অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম। গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও এ বিষয়ে কাজ করছে।
দায় অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে রায় আসবে মন্তব্য করে মনিরুল বলেন, ‘সে দিনের ঘটনায় যার যে ভূমিকা ছিল অর্থাৎ হলি আটিজানের ঘটনার সংগঠনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কিংবা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে যাদের যে ভূমিকা ছিল সেটি আমরা চার্জশিটে উল্লেখ করেছি। আমরা সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে আদালতে প্রমাণের চেষ্টা করেছি। আমরা আশা করছি, দায়-দায়িত্ব অনুযায়ী প্রত্যাশিত রায় পাব।’
কারাগারে থাকা আসামিদের রায়ের দিন ছিনিয়ে নেয়া বা রায়কে কেন্দ্র করে কারও কোনো নাশকতার পরিকল্পনা আছে কি না প্রশ্নে মনিরুল বলেন, ‘এ ব্যাপারে যথেষ্ঠ সর্তকতা এবং নজরদারি রয়েছে।’
নজিরবিহীন ওই হামলা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিপজ্জনক বিস্তারের মাত্রা স্পষ্ট করে তোলে। হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে দলটির শীর্ষনেতাদের বেশ কয়েকজন মারা পড়েন।
নব্য জেএমবি ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় হামলা চালিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে শরীয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে এই হামলার ছক কষেছিল বলে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে তাদের মধ্যে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ৩ ডিসেম্বর মামলার বাদী এসআই রিপন কুমার দাসের জবানবন্দি নেওয়ার মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার শুরু হয়েছিল। ২০০৯ সালের এই আইনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হত্যার অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আলোচিত এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এই মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন।
এই হামলায় জড়িত হিসেবে যে আটজনকে জীবিত গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয় হামলার পর এসআই রিপন কুমার দাসের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলাটিতে। আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। তারা সবাই বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এই মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষে ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়।