আজ প্রশ্নের সম্মুখীন অভ্যন্তরীণ অনিয়মের কারণে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন । সাম্প্রতিক সময়ে শূন্য পদের বিপরীতে কর্মচারি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কিত কোন বিষয়ই কমিশনকে অবহিত করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আজ দুপুরে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং-এ অভিযোগ করেন তিনি।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ৩৩৯ জনকে নিয়োগ দিতে ৮৫ হাজার পরীক্ষার্থীর আবেদন যাচাই বাছাই ও পরীক্ষার আয়োজন করতে ইসি সচিবালয় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের একটি বিভাগকে ৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা প্রদান করে। কিন্তু কতজন পরীক্ষককে, কিভাবে টাকা প্রদান করা হয়েছে তার কোন হিসাব কমিশনের কাছে নেই। এমনকি নিয়োগ কমিটির সদস্যরাও এ বিষয়ে অবহিত নন।
নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনারদের কিছু না জানানোকে সংবিধানের লঙ্ঘন বলেও মনে করছেন মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ১২ এবং ২০ গ্রেডে শূন্য পদে ৩৩৯ জনকে নিয়োগ এবং সেই পরীক্ষা থেকে বহিষ্কৃত ১৩৫ জনের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সে বিষয়ে জানতে চেয়ে কোন তথ্য পাননি তিনি।

এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে না বলেও আশঙ্কা করেন এই নির্বাচন কমিশনার।

মাহবুব তালুকদারের পুরো বক্তব্য
আমি মনে করি, অভ্যন্তরীণ অনিয়মের কারণে, এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। অনেক ক্ষেত্রে সচিবালয়ের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কিন্তু, নির্বাচন কমিশনকে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই দায় বহন করতে হয়।
এই অনভিপ্রেত অবস্থার অবসানের জন্য নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত বিষয়ে সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ও নির্বাচন কমিশন কার্যপ্রণালী বিধিমালা কঠোরভাবে পরিপালন করা আবশ্যক। নির্বাচন কমিশন ও সচিবালয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এক ধরণের স্বেচ্ছাচারিতা চলে আসছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “এগুলো সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ও নির্বাচন কমিশন কার্যপ্রণালী বিধিমালা সমর্থন করে না।”

মাহবুব তালুকদার বলেন, “গত ১২ নভেম্বর আমি সংবাদ পাই যে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাম্প্রতিক কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় ১৩৫ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু, কারো বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে বিশদভাবে জানার জন্য আমি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কাছে লিখিতভাবে কিছু তথ্য ও জিজ্ঞাসার জবাব জানতে চাই।”

“গত ১৪ নভেম্বর আমাকে জানানো হয় যে, হাতের লেখার অমিল বা পরিচয়পত্রের অমিলের কারণে ভাইবার সময় ওই ১৩৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়। তাদের প্রতারণার দায়ে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আমার এমন প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়− ‘মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। কারো কারো কাছ থেকে লিখিত স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে’।”

“লিখিতভাবে আমাকে আরও জানানো হয়, কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৩৯টি শূন্যপদের বিপরীতে ৮৫ হাজার ৮৯৩ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও উত্তরপত্র যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদকে ৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।”

“এই অর্থ প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনুমোদন করলেও কতোজন পরীক্ষককে কীভাবে এই টাকা দেওয়া হয়েছে, তার কোনো হিসাব নির্বাচন কমিশনের কাছে নেই। এমনকী, নিয়োগ কমিটির সদস্যরা এবিষয়ে অবহিত নন। কমিশন সচিবালয় পরীক্ষা সম্পর্কে কিছুই জানে না। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের ধরণ বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ।”

তিনি বলেন, “১৪ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে তার অফিসকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় নির্বাচন কমিশনাররা অভিযোগ করেন যে, কমিশন সচিবালয় উক্ত নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত ও অর্থ ব্যয় সম্পর্কিত বিষয়ে কমিশনকে কোনো পর্যায়েই অবহিত করেনি। উত্তরে কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব জানান, উল্লিখিত নিয়োগ বা এতদসংক্রান্ত ব্যয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও তার বক্তব্য সমর্থন করেন।”

“স্বাভাবিক কারণেই নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ ২৪ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটি ইউ, ও নোটের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কার্যাদির বিষয়ে কমিশনের এখতিয়ার সম্পর্কে অবহিত হতে চান।”

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031