আমাদের অর্থনীতি এখন অনেক শক্তিশালী  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন। কাজেই আমি চাই, প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে নিজের দেশকে গড়ে 
তুলবেন। তিনি বলেন, দেশে যদি শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে তাহলে অগ্রগতি অবশ্যম্ভাবী, এটা হতেই হবে। তাই, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে তা অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, কারো কাছে হাত পেতে নয়, কারো কাছে মাথা নত করে নয়। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে, সম্মানের সঙ্গে চলবে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব, এটাই আমাদের লক্ষ্য।

আর সেভাবেই আমরা দেশকে গড়তে চাই। দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা’ ও ‘নিষ্ঠা’র সঙ্গে ‘সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ’ ও ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ কর্মপ্রচেষ্টা’র মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সর্বাবস্থায় চেইন অব কমান্ড মেনে ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে দেশ গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।

দেশের মানুষ যেন শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারে, সে ব্যবস্থাই আমরা করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্রবাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক আখ্যায়িত করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং জনকল্যাণে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আবু মোজাফ্‌ফর মহিউদ্দিন মোহাম্মাদ আওরঙ্গজেব চৌধুরী এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন। স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র সদস্যবৃন্দ, তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

অপপ্রচারে কান না দেয়ার আহবান: ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুজবে কান না দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে আমরা দেখি, অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়। আমি সবাইকে একটা কথা বলবো, এই অপপ্রচারে কান দেবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন অপপ্রচার বিশেষ করে পিয়াজ, লবণ প্রভৃতির সংকটের অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এটা করবে আমি জানি, এটা স্বাভাবিক। কাজেই সেটাকে মোকাবিলা করেই আমাদের চলতে হবে, আমরা সেভাবেই চলছি। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য এবং সশস্ত্র বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৯ উপলক্ষ্যে এই সংবর্ধনার আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার মাছ এবং সবজিসহ বিভিন্ন তরিতরকারীর উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে এবং এখন জনগণের নিরাপদ খাদ্য এবং পুুষ্টির চাহিদা পূরণে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করছি। জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে আমরা যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি এবং তা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানবে বাঙালি জাতি কখনো হারতে জানে না। এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের আত্মমর্যাদার ধারণা তৈরি হবে এবং তারা মাথা উঁচু করতে চলতে শিখবে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার মহান দায়িত্ব সশস্ত্রবাহিনীর ওপর ন্যস্ত। এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও সশস্ত্রবাহিনীর দেশ প্রেমিক সদস্যরা দেশ মাতৃকার নানা কাজ যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে তাদের সহযোগিতার হাতকে প্রসারিত করা অব্যাহত রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইজন্য আমরা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের জন্য বিভিন্ন জনকল্যাণ মুখী যেমন-আধুনিকায়ন, ভৌত এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিক সম্মান প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করায় ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের ৭ বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য এবং খেতাব জয়ী সশস্ত্রবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সম্মানীর চেক এবং উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন। তিনি অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের হাতে ‘বিশিষ্ট সেবা পদক’ এবং ৯ জন সেনা সদস্য, দ’ুজন নৌবাহিনীর সদস্য এবং তিনজন বিমানবাহিনীর সদস্যদের হাতে শান্তিকালিন ‘বাহিনী পদক’ তুলে দেন। সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের পিএসও লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.মাহফুজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষযক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আবু মোজাফফর মহিউদ্দিন মোহাম্মাদ আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত এবং উচ্চ পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করা হয় তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে। সকালে শিখা অনির্বানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিন বাহিনী প্রধান নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031