রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় শিশুদের বহিষ্কার করা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে। একইসঙ্গে বহিষ্কার হওয়া শিশুদের পুনরায় পরীক্ষা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই রুল জারি করেন। এছাড়া, এ-সংক্রান্ত শৃঙ্খলা ভঙ্গ বিষয়ক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত বছরের জারি করা নির্দেশনার ১১ নম্বর অনুচ্ছেদ কেন অবৈধ হবে না, রুলে তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালত ১০ই ডিসেম্বর পরবর্তী আদেশের তারিখ ধার্য করেছেন।
গত ১৯শে নভেম্বর, পিইসি পরীক্ষায় শিশু বহিষ্কার কেন শিরোনামে জাতীয় দৈনিক দেশরূপান্তর পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে এনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চান। এরপর আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১৫ শিশু বহিষ্কার হয়েছে। পরীক্ষায় অসাধুপন্থা অবলম্বন করার অভিযোগে এসব শিশুকে বহিষ্কার করা হয়। এ বিষয়ে নির্দেশনাও রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তবে শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী, শিক্ষক এমনকি অভিভাবকরা বলছেন, কোমলমতি শিশুদের এ ধরনের বহিষ্কার তাদের ওপর এক ধরনের মানসিক নির্যাতন। যারা পরীক্ষা কিংবা নকল করার বিষয়টিই এখনো ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনি। এ ব্যাপারে কর্তব্যরত শিক্ষকরা আরও সচেতন হলে এ ধরনের বহিষ্কার এড়ানো যেত। শিশুদের বহিষ্কারের বিষয়টি নির্দেশনায় রাখা কতটা যৌক্তিক তা ভাববার বিষয় রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র থেকে দেখা গেছে, প্রবেশপত্রটির উল্টো পাশে ‘পরীক্ষার্থীদের জন্য নিয়মাবলি’ উল্লেখ করে ১১টি নিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। এর ২ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, পরীক্ষার হলে প্রবেশপত্র ছাড়া অন্য কোনো অননুমোদিত কাগজপত্র বা ক্যালকুলেটর বা মোবাইল ফোন সঙ্গে আনা যাবে না। অথচ এগুলো সঙ্গে আনলে বহিষ্কার করা হবে কি না তা বলা নেই। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে গত বছর ডিসেম্বরে জারি করা এক নির্দেশনার ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘শৃঙ্খলা লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’ বিষয়বস্তুতে কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়েছে, পরীক্ষার হলে একে অন্যের সঙ্গে কথা বললে, অননুমোদিত কাগজপত্র বা বস্তু সঙ্গে রাখলে, অন্যকে দেখানোর কাজে সহযোগিতা করলে, উত্তরপত্র ছাড়া অন্যকিছুতে লিখে আনলে তাকে ওই বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করা যাবে অথবা তার পরীক্ষা বাতিল করা যাবে।