স্বাভাবিক হয়নি সড়ক আইন সংস্কারের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হলেও । গতকাল চতুর্থ দিনের মতো দেশের বিভিন্ন জেলায় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। সড়কে শ্রমিকদের নৈরাজ্য ছিল। রাজধানী থেকেও ছেড়ে যায়নি বিভিন্ন গন্তব্যের বাস। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। বাস না চলায় জরুরি প্রয়োজনে ট্রেনে করে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মানুষ। এতে রেল স্টেশনে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। গতকাল রাজধানীর সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে বাস ছেড়ে গেলেও তা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম।
গাবতলী টার্মিনাল থেকেও স্বল্প সংখ্যাক বাস ছেড়ে যায়। মহাখালি থেকে ছেড়ে যায় হাতেগোনা কিছু বাস। এ অবস্থায় গন্তব্যে যেতে টার্মিনালে এসেও ফিরে যেতে হয় অনেককে। বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে শ্রমিক-মালিকদের বৈঠকের পর ট্রাক কাভার্ড ভ্যানের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। এতে গতকাল থেকে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক হয়। তবে বাসের অঘোষিত ধর্মঘট বহাল ছিল। সরজমিন দেখা গেছে, মহাখালী টার্মিনালের সব ধরনের বাসের টিকিট কাউন্টারগুলো বন্ধ। তবে টিকিট বিক্রি ছাড়াই দু’একটি বাস ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছেড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট বিক্রি ছাড়াই এনা পরিবহনসহ দু’একটি বাস ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে ছেড়ে গেছে। টার্মিনালে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন রুটের বাসগুলো রাখা ছিল।
সরজমিন দেখা যায়, রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে কিছু কিছু বাস ও ট্রাক গন্তব্য ছেড়ে গেছে। তবে পুরোপুরি বাস চলাচল না করায় যাত্রীরা অনেকেটা জিম্মি অবস্থায় ছিলেন। বেশি দুর্ভোগে পড়েন শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেককেই কাউন্টারে বসে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। এই টার্মিনালের ভেতরে অসংখ্য বাস দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। টার্মিনালের কিছু কাউন্টার খোলা ও কিছু কাউন্টার বন্ধ ছিল। গতকাল সকাল ৯ টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনালে প্রায় শতাধিক পরিবহন শ্রমিক সড়কে ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় যাওয়া বাস ও ট্রাকগুলোকে চলাচলে বাধা দেন। তারা পরিবহনের চালক ও হেলপারদের গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তারা সড়ক থেকে টার্মিনালের মধ্যে চলে যায়। হানিফ বাস কাউন্টারের টিকিট মাস্টার শফিকুল ইসলাম জানান, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বাসের সার্ভিস ঢিলেঢালা রয়েছে। শ্যামলী বাস কাউন্টারের টিকিট মাস্টার আরশাদ আলী জানান, ভোর বেলায় কিছু শ্রমিক এসে তাদের টিকিট বিক্রয় করতে নিষেধ করেন। বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেন। তবে পুলিশ এসে আমাদের টিকিট বিক্রয় করতে আদেশ দিয়ে গেছেন। টার্মিনাল থেকে কিছু বাস গন্তব্য ছেড়ে গেছে।
নওগাঁগামী যাত্রী মোখলেসুর রহমান জানান, চিকিৎসার জন্য গত সোমবার তার বাবাকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। তার বাবা এখন ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে ভর্তি। জরুরি কাজে এখন যেতে হবে। কাউন্টারে এসে টিকিটের খোঁজ করলে কাউন্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বাস দেরিতে ছাড়বে। কখন ছাড়বে তা তারা বলতে পারেনি। তখন থেকে কাউন্টারে বসে আছি। দারুস সালাম থানার ওসি আসলাম উদ্দিন গতকাল দুপুরে মানবজমিনকে জানান, পরিবহন ধর্মঘট উপলক্ষে দুষ্কৃতিকারীরা যাতে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য সকাল থেকে গাবতলী বাস টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তিনি আরো জানান, সকাল থেকে কম বাস চলাচল করলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহন গন্তব্যে যাওয়ার পরিমান বাড়ছে।