ঢাকা ১২ জুন : রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আশুলিয়ার নবীনগরে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট ও থানা পুলিশের কারিশমায় আটক ছিনতাইকারী ও ছিনতাইকৃত নগদ প্রায় ৯ লাখ টাকা ‘ভ্যানিস’ হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের অনেক চেষ্টার পরও ছিনতাইকারী ও টাকার কোনো হদিস মেলেনি।
গোপন সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকাল ১০টায় নবীনগর এলাকায় স্থানীয় একটি পরিবহনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি একটি ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় উপস্থিত লোকজনের বিষয়টি সন্দেহজনক হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু তিনি সত্য না বলায় পরে তাকে নবীনগর স্ট্যান্ডে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্টের হাতে তুলে দেয় জনতা। পরে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি প্রায় ৯ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের কথা সাভার হাইওয়ে পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট সোহেল রানার কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন। আর এরপর থেকেই শুরু হয় টাকা ও ছিনতাইকারী ভ্যানিসের ফন্দি-ফিকির।
হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান ঢাকাটাইমসকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। এ সময় তিনি ট্রাফিক সার্জেন্টের ওই কর্মকর্তাকে আটক ছিনতাইকারী ও উদ্ধার হওয়া টাকার ব্যাপারটি আশুলিয়া থানা পুলিশের জানানোর জন্য নির্দেশনা দেন। তবে প্রায় ৯ লাখ টাকা উদ্ধারের ব্যাপারটি তিনি অবগত নন বলে জানান।
তাৎক্ষণিকভাবে ছিনতাইকারী আটক ও টাকা উদ্ধারের ঘটনাটি তদন্তে সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও সেখানে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সোহেল রানা ও আটক ছিনতাইকারী তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি।
এসময় মুঠোফোনে সার্জেন্ট সোহেল রানা ঢাকাটাইমসকে ছিনতাইকারী আটক ও টাকা উদ্ধারের কথা স্বীকার করেন। তবে টাকা ও ছিনতাইকারীকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ঠিক কত টাকা উদ্ধার হয়েছে এব্যাপারে তিনি মুখ খোলেননি।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ঘটনাস্থলে কিলো-৬ এ দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমানকে পাঠানো হয়েছে।
এরপর মতিউর রহমানের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই থানার সেকেন্ড অফিসার তাকে ডেকে পাঠান। তাই তিনি সেখানে যেতে পারেননি।
ঘটনার সত্যতা জানতে অনেকবার আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদিরের মুঠোফোনে চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। অবশেষে বেলা ১২টার দিকে পুলিশের এই কর্মকর্তা মুঠোফোন ধরে আটক ছিনতাইকারীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় কোনো বাদী না থাকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে প্রায় ৯ লাখ টাকা উদ্ধারের ব্যাপারটি অস্বীকার করে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানান।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকালে আশুলিয়ার চক্রবর্তী এলাকার ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী মো. নবীর ব্যবসার ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা ছিনতাই হয়েছে।
ভুক্তভোগী নবী ঢাকাটাইমসকে জানান, তিনি ডাচ বাংলা ব্যাংকের সাভার-আশুলিয়ার ডিলারশিপ নিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করেন। গত ১০ শনিবার সকাল ১০টায় তার দোকানের কর্মচারী রাশেদ রিকশাযোগে গ্রাহকদের ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে দোকান থেকে আশুলিয়া থানা সংলগ্ন ডাচ বাংলা ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। এসময় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চক্রবর্তী এলাকায় তিন ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে তাকে আহত করে টাকাগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়।
নবী আরও জানান, এরপর তিনি আশুলিয়া থানায় এলে ঘটনাটি গাজীপুর এলাকায় ঘটেছে বলে সেখানে যেতে বলেন। পরে তিনি চক্রবর্তী পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে সেখান থেকে তাকে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় যেতে বলা হয়। এতগুলো টাকা হারিয়ে তিনি ভীষণ হতাশায় দিন পার করছেন বলে জানান।
প্রসঙ্গত, এর আগেও সীমানা জটিলতা নিয়ে আশুলিয়া থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করতেই রাজধানী ঢাকাসহ চার থানায় ঘুরেছেন এক ভুক্তভোগী নারী। পরে ঢাকাটাইমসে সংবাদ প্রকাশের পর তা গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও হত্যা, অপহরণ ও দুর্ঘটনার মত অসংখ্য ঘটনা কেবল সীমানা জটিলতার কারণে আটকে গেছে।