চালের বাজার হঠাৎ অস্থির । সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই বাড়ছে চালের দাম। গত দুই দিনে রাজধানীতে কেজি প্রতি চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে ছয় টাকা। এর মধ্যে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। বিরি-২৮ চালের দাম পাইকারিতে দুই টাকা আর খুচরা বাজারে বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত ৫০ কেজির প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৯০০ টাকা দরে, বাসমতি ৩ হাজার টাকা, আটাশ ছিল সাড়ে ১৫০০, আর নাজিরশাইল ২ হাজার ৮০০ টাকা। এ কয়দিনে বাজারে চাল সরবরাহে তৈরি হয়নি কোনো সংকট।

এরপরও বস্তা হিসেবে প্রায় সব চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি দরে। বাজারে মিনিকেট আর আটাশের চাহিদা বেশি হওয়ায় এ দুটি চালের দাম বাড়ানো হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বাজার বিবেচনায় এ পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক দাবি করে নেপথ্যে মিল মালিকদের কারসাজি দেখছেন আড়তদাররা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ভোক্তারা বলেন, গত ২ মাস ধরে পিয়াজের দাম নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষ নাভিশ্বাসের মধ্যে আছি। এর মধ্যে আরেকটি দুঃসংবাদ হয়ে এলো চালের দাম। আমরা এখন কোথায় যাবো।
রাজধানীর কাওরান বাজারের খুচরা বাজারে মিনিকেট ৫০ টাকা, আটাশ ৪০ টাকা ও নাজির ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৪৫ টাকা, ৩৫ টাকা ও ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মায়ের দোয়া স্টোরের কর্মচারী বাবলু বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে সব ধরনের চালের দাম ৫ টাকা বেড়েছে।
বরিশাল রাইস মিলের কর্মচারী, হাছান মাহমুদ বলেন, বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। প্রতি বস্তা মিনিকেটে দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। আর আতপ চালের বস্তা বেড়েছে ৩০০ টাকা করে।
চাটখিল রাইস এজেন্সীর মালিক বেলাল হোসাইন বলেন, মৌসুম শেষ হয়ে আসায় চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। সামনে নতুন চাল উঠলে তখন দাম কমে যাবে।

মেসার্স হাজী ইসমাইল এন্ড সন্সের মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা এতদিন ২০০০ থেকে ২০৫০ টাকা বস্তাতে চাল বিক্রি করেছি। যে চাল কিনেছি তা বিক্রি করতে হবে ২১০০ থেকে ২২০০ টাকায়। মিনিকেট এখন ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা বস্তাতেও বিক্রি হচ্ছে। আটাশ ১৫০০ থেকে ১৫৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১৬০০ টাকা বস্তা। তিনি বলেন, নতুন চালানের চালের দাম আরো বাড়বে। এই আড়তদারের অভিযোগ মিলাররা চালের অর্ডার নিচ্ছে না। তাই সরবরাহ না বাড়ায় দাম বাড়াতে হচ্ছে।

রাজধানীর কৃষি মার্কেটের একজন বিক্রেতা বলেন, বুধবার মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে দুই হাজার টাকায়। শুক্রবার সেটি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। একই মার্কেটের আরেক বিক্রেতা বলেন, বুধবার মিনিকেট বিক্রি করেছি ৪২ থেকে ৪৫ টাকা  কেজি। এখন বিক্রি করছি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।

মেসার্স সিমন অ্যান্ড সিফাত রাইস এজেন্সির এক বিক্রয়কর্মী বলেন, গত বুধবারের চেয়ে মিনিকেট এখন প্রতি কেজিতে ছয় টাকা বেশি দামে বিক্রি করছি। বিরি-২৮ চাল ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি দুই দিন আগে। এখন তা বিক্রি করছি ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায়। প্রতি কেজি স্বর্ণা বিক্রি করেছি ৩২ টাকায়, এখন বিক্রি করছি ৩৫ টাকায়। বুধবার নাজিরশাল ৪৮ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন বিক্রি করছি ৫৪ টাকায়। প্রতি কেজি চিনিগুঁড়া ৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯০ টাকা।

রাজধানীর চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, উত্তরাঞ্চলের ধান-চালের সবচেয়ে বড় মোকাম নওগাঁয় এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন চালের দাম বেড়েছে প্রতি কজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা। আর বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে প্রায় ২০০ টাকা। বিরি-২৮ জাতের ধানের সরবরাহ কমায় চালের দাম বেড়েছে। মোকাম থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দাম বেড়েছে আটা-ময়দারও। রাজশাহী ট্রেডার্সের মালিক মো. মোক্তার হোসেন জানান, ময়দার দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ১৫০ টাকা ২০০ টাকা।

হটাৎ করে দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের যুক্তি হচ্ছে, মৌসুম শেষ হয়ে আসাই চালের দাম বাড়ার কারণ। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী মিলারদের কারসাজিকে দায়ী করছেন। আবার মিলাররা বলছেন, সরকার আমন মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়ায় তাদের বাড়তি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
এদিকে, কৃষকের মাঠে এখন আমন ধান রয়েছে। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক জমিতেই আমন ধান পাকতে শুরু করেছে। সবমিলিয়ে আমন ধানের নতুন চাল বাজারে উঠবে শিগগিরই।

এদিকে, গেল বোরো মৌসুমে প্রায় ২ কোটি টন ধান উৎপাদন হয়েছিল। বাম্পার ফলন ও দাম না পেয়ে মাঠেই ধান পুড়িয়ে ফেলেছিল কৃষক। এ ঘটনায় সরকার নড়েচড়ে বসলেও ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারেনি। অভিযোগ ছিল, মিলাররা ঠিকমতো ধান কিনছেন না। বাধ্য হয়ে ৫০০ টাকা মণেও ধান বিক্রি করতে হয়েছিল কৃষককে। চাল আমদানিতে শুল্ক দ্বিগুণ করা হলেও মাঠে তার ফল লক্ষ্য করা যায়নি। উল্টো পাঁচ মাস যেতে না যেতেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এরইমধ্যে দেশের কোথাও কোথাও বোরোর বীজতলা তৈরি শুরু হয়েছে। আগামী বছরের এপ্রিল মে মাসের দিকে কৃষকের গোলায় বোরো ধান উঠতে শুরু করবে।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, সরকারই তো চালের দাম বাড়াতে চাচ্ছে। চালের দাম বৃদ্ধি ভালো লক্ষণ। সরকার আমন মৌসুমে ২৬ টাকা কেজিতে ধান কিনবে। আগে আমরা ১৫ টাকা কেজিতে ধান কিনতে পারলেও এখন ২০ থেকে ২২ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। ফলে বাজারে চালের দাম বেড়েছে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031