২ জন নিহত হয়েছেন ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে বরগুনায় । ৬৪ মাঝি-মাল্লাসহ ৭টি মাছধরার ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়াও ট্রলারডুবিতে ৪ জন জেলে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন ঘরচাপা ও গাছ পড়ে ১৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার রাতে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে ঘূর্ণিঝড়ে বুলবুলে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়েছেন। এসময় পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ূন শাহিন খানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের বানাই গ্রামের মোজাফফর আলীর স্ত্রী হালিমা খাতুন শনিবার রাতে ডিএন কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। রোববার বিকেল ৪টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্ধস্ত গাছের ডাল কাটতে ছিলেন, বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ছোট লবনগোলা গ্রামের মহিবুল্লাহ। এসময় তিনি গাছ থেকে পড়ে আহত হলে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়।
পরে সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা গেছেন।
বরগুনায় আমন ও শীতকালীন শাক সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার ৬টি উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ১০ শতাংশ কৃষির ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফদর সূত্রে জানা যায়, এবছর বরগুনা জেলায় ৯৮ হাজার ৬৩৯ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ৯ হাজার ৮৬৩ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া শীতকালীন শাক সবজি চাষ হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে ৫৫০ হেক্টর জমির সবজি। পানের বরজ ও মরিচের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে গবাদি পশু নিহত ৩টি, আহত ৪১টি, ক্ষতিগ্রস্ত ৫
হাজার ২৩৫টি বসতঘর, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৮৬টি, ক্ষতিগ্রস্ত
বাঁধ ৩৮.৫ কিলোমিটার বেরিবাধ। মৎস্য বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত
পুকুর ৬০টি, মৎস্য ঘের ৬৫টি, চিংড়ি ঘের ৩৫টি। ১ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি
হয়েছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ২৯৪ মেট্রিক টন
চাল, ৭ লাখ টাকা, ৩৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫০টি কম্বল বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে আমরা ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করেছি। পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির তালিকা
প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসিত করা হবে।
বুলবুলের আঘাতে সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা বলেশ্বর নদের তীরবর্তী পাথরঘাটা উপজেলা।
এছাড়া
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তা-বে বিদ্যুত লাইনের ওপর গাছ পড়ায় এবং বিদ্যুতের খুঁটি
ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বরগুনার সব উপজেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুতের লাইন সচল করতে ওই বিভাগের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে
দেওয়া হয়নি। আর এ কারনেই বন্ধ রয়েছে জেলার সব মোবাইল নেটওয়ার্ক।
রোববার
(১০ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত কোনো ধরনের নেটওয়ার্ক নেই। এর আগে
শনিবার (০৯ নভেম্বর) রাত থেকে বরগুনা সদরসহ উপজেলাগুলোতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
হওয়ার ফলেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।