সড়কে নতুন আইন কার্যকরের পর মূল সড়কগুলোতে লাইসেন্সবিহীন চালক, ফিটনেস ও নিবন্ধনহীন গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে। তাদের চাপ এখন বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) কার্যালয়ে। বিশেষ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস পেতে সেবা প্রার্থীদের ভিড় সেখানে। ওই দুই শাখায় দৈনিক গড়ে অন্তত ৪শ’ থেকে ৫শ’ আবেদন জমা পড়ছে। যা স্বাভাবিকের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি।
বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, সড়ক পরিবহন নতুন আইনে জেল ও জরিমানার বিধান পূর্বের আইনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি করা হয়েছে। গত পহেলা নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর করা হয়। আইন কার্যকর নিয়ে সড়কে পুলিশও কড়াকড়িতে রয়েছে। এতে সবাই এখন বিআরটিএ কার্যালয়ে ভিড় করছে। কাজের চাপ বেড়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে। কার্যালয়টিতে বেশিরভাগ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদের জন্য আবেদন বেশি জমা পড়ছে।
এব্যাপারে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোস্তাক আহমেদ বলেন-বর্তমানে সড়কে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা বেশ কিছু কার্যক্রম শুরু করেছি। আগে সড়কে ফিটনেস ও নিবন্ধনবিহীন গাড়ি চলত, এখন তা কমে গেছে, লাইসেন্স বিহীন চালক নেই। মোটর সাইকেলে চালানোর সময় হেলমেট পড়ত না, এখন হেলমেট পড়ছে, অনেক গণপরিবহন রুট অনুযায়ী চলত না, সেগুলো রুট অনুযায়ী চলা শুরু করেছে। টাইগার পাস থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধের বিষয়টি কিছুটা কার্যকর হয়েছে। পাঁচ হাজার গাড়ির জন্য পার্কিং ব্যবস্থা করেছি। বাস চালকদের অনেকেই নির্ধারিত পোশাক পরে এখন গাড়ি চালাচ্ছেন। এভাবে নানা কার্যক্রম ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে নেয়া হচ্ছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা দ্রুত ফিরে আসবে।
সড়কে নতুন আইন কার্যকর নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকার কারণে এখন যাদের যানবাহনের কাগজপত্র বা ফিটনেস নেই, চালকদের লাইসেন্স নেই। তারা এখন বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক করার জন্য যাচ্ছে।
বিআরটিএ’র তথ্যমতে, গত পহেলা নভেম্বর থেকে বিআরটিএ কার্যালয়ে লাইসেন্স শাখায় গড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ সেবা প্রার্থী ভিড় করছে। এর আগে দৈনিক অন্তত ২শ’ সেবা প্রার্থী ওই শাখায় ভিড় করত।
ফিটনেস শাখায় ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ আবেদন জমা পড়ছে। আগে ও্ই শাখায় দুই থেকে আড়াইশ’ সেবা প্রার্থীর আবেদন জমা পড়ত। যানবাহনগুলোর নিবন্ধন শাখায় মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে গড়ে দৈনিক ১১০ ও অন্যান্য যানবাহনে ১৫টি করে আবেদন জমা পড়ছে।
বিআরটিএ লাইসেন্স শাখার পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া সড়কে গাড়ি চালিয়ে থাকে। লাইসেন্সের বাহিরে থাকা চালকদের বিশাল একটি অংশ এখন
একসাথে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স (লার্নার) আবেদন করতে দৈনিক ৪/৫শ’ মানুষ কার্যালয়ে ভিড় করছে। আগের তুলনায় এদের সংখ্যা দুই থেকে তিনগুণ বেশি। তবে ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্রের কারণে অর্ধেক আবেদনই বাতিল হচ্ছে।
আবেদনের সময় প্রার্থীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জাল সার্টিফিকেট ও ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র ধরা পড়ছে জানিয়ে বিআরটিএ কর্মকর্তা শফিক বলেন, নিয়মানুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করতে নূন্যতম অষ্টম শ্রেণি পাস প্রয়োজন।
গত ৩ থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত জাল সার্টিফিকেট নিয়ে অন্তত ১শ’টি আবেদন আমাদের কাছে ধরা পড়েছে বলে জানান বিআরটিএ কর্মকর্তা শফিক তুহিন। লাইসেন্স আবেদন নিয়ে সার্টিফিকেট জালিয়াতির একটি চক্রও তৈরি হয়েছে বলে জানান বিআরটিএ’র এই কর্মকর্তা।
বিআরটিএ কার্যালয়ে ফিটনেস শাখার মোটরযান পরিদর্শক পলাশ খীসা বলেন, আগের তুলনায় ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। লোকজন কম থাকায় সকাল থেকে টানা কাজ করতে হচ্ছে। বর্তমানে ফিটনেসের জন্য ৪ থেকে সাড়ে ৪শ’ আবেদন জমা পড়ছে ।
বিআরটিএ কার্যালয়ের নিবন্ধন শাখার পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, তাদের শাখায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা পড়ছে। প্রতিদিন অন্তত ১১০ মোটরসাইকেল নিবন্ধনের জন্য আসছে।
সরেজমিন বিআরটিএ কার্যালয়ে ফিটনেস ও লাইসেন্স শাখায় উপচে পড়া ভিড় এবং ব্যাংকে টাকা জমা দিতে সেবা প্রার্থীদের দীর্ঘ লাইনে দেখা গেছে। বিভিন্ন শ্রেণির যানবাহন বিআরটিএ কার্যালয়ে দেখা যায়। বিআরটিএ’র পরিদর্শকরা যানবাহনগুলোর ফিটনেস পরীক্ষার পর সনদ দিয়ে থাকেন।