‘মিস্টার ১২ পার্সেন্ট’ হিসেবে পরিচিত সেই নজরুল ইসলামকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার সাবেক চেইনম্যান বর্তমানে ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদে কর্মরত নজরুলকে ৯১ লাখ টাকা কমিশনের চেক ও নগদ সাড়ে ৭ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর শপিং কমপ্‌্েলক্সে নিজের দোকান থেকে তাকে ধরা হয়। একইসাথে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের অফিস সহকারী তছলিম উদ্দিনকেও ৫৭ হাজার টাকাসহ দুদক নিজেদের আওতায় নিয়েছে। কমিশন কানেকশনে তছলিম জড়িত কিনা তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান দুদকের কর্মকর্তারা। এ কারণে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত
নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার চেইনম্যান থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তাকেসহ তিনজনকে তাৎক্ষণিক বদলির নির্দেশ দেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি। এরপর তার কর্মস্থল হয় ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদে। কিন্তু তিনি দিনের অধিকাংশ সময় শপিং কমপ্লেক্সে থাকেন বলে অনেক ভুক্তভোগীই অভিযোগ করেছেন।
এদিকে শপিং কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার ‘আনুকা’ নামের একটি কাপড়ের দোকান থেকে নজরুলকে আটক করা হয়। ওই দোকানসহ এ শপিংমলে তার ইয়ানা নামের একটি কাপড়ের এবং আরেকটি খাবারের দোকান আছে। একই সময়ে ওই দোকানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহকারী তছলিম উদ্দিনকেও পাওয়া যায়। তার দেহ তল্লাশি করে পকেটে ৫৭ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তবে তসলিম দাবি করেন, তিনি কাপড় কিনতে সেখানে এসেছেন। দুদকের কর্মকর্তারা জানান, তিনিও একই চক্রের সদস্য। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুদক সূত্রে বলা হয়, ক্ষতিপূরণের ১২ শতাংশ টাকা তাদের দিয়ে দিতে হতো। তবেই পাওয়া যেত ক্ষতিপূরণের টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কাপড় কেনার জন্য এসময়ে ৫৭ হাজার টাকা নিয়ে কেউ মার্কেটে আসে বলে মনে হয় না। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, ভূমি অধিগ্রহণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ যে টাকা পান, সেই টাকা ছাড় করাতে কমিশন দিতে হয়। আর এ কমিশনের ভাগ অনেকেই পান। সেই কমিশন তোলার কাজটি করতেন নজরুলসহ জড়িত অন্যরা। অগ্রিম কমিশনের অংশ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে চেক ও টাকাগুলো নেওয়া হয়েছে। তছলিম উদ্দিনও তাঁর সঙ্গে কাজ করতেন।
জানা গেছে, দুদকের সমন্বিত জেলা-২ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশের নেতৃত্বে দুদকের একটি দল অভিযান পরিচালনা করে। তিনি আরো জানান, তছলিম উদ্দিনকে এখনো আটক দেখা হয়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দোকানের দুজন কর্মচারীকেও দুদক কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। অভিযানের সময়ে দোকানের সিসি ক্যামেরাসহ কাগজপত্রও জব্দ করে নিয়ে যান দুদকের কর্মকর্তারা।
নজরুল নগরী থেকে আটক হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অফিস থেকে বৃহস্পতিবারের একদিনের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন বলে জানান ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সায়েদুল আরেফিন। তিনি বলেন, তাকে আটকের খবর জানা নেই। খবর নিয়ে দেখছি।
দুদকের হাতে আটক হওয়ার সময় নজরুলের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘৩০ হাজার টাকা বেতন পাই। বাড়িতে আমার অনেক জায়গা সম্পত্তি আছে। আমি কি ফকিরের ছেলে?’ এত নগদ টাকা ও চেক পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব তারা (ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি) রেখে গেছেন। কাপড় কিনতে আসার দাবি করা জেলা প্রশাসন অফিসের কর্মচারি তছলিম উদ্দিন দাবি করেন, তিনি কাপড় কিনতে সেখানে এসেছেন। ৫৭ হাজার টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাকিতে কেনা একটি মোবাইলের টাকা পরিশোধ করার জন্য টাকাগুলো এনেছি।
অভিযানের সময় দুদকের কর্মকর্তাদের কাছে খবর আসে, চট্টগ্রাম নগরে নজরুলের মালিকানাধীন কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে। একটি ফ্ল্যাট থেকে নগদ টাকা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরপর দুদকের আরেকটি দল তার ফ্ল্যাটের সন্ধানে বের হয়। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখার সময় (রাত ৯টা) দুইটি ফ্ল্যাটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। দুদক সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মাহমুবুল আলমের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে ফ্ল্যাটগুলো থেকে কোন কিছু উদ্ধার হয়নি। অভিযান পরিচালনার আগেভাগে খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানায় দুদকের অভিযান দল।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031