চট্টগ্রাম, ১০ জুন : মাহমুদা খানম মিতু এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মনির হোসেন নামের এক যুবককে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসির মোড় থেকে তাকে আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, হত্যকাণ্ডের সময়কার সিসিটিভির ফুটেজে রয়েছেন মনির। ওই সময় তার পরনে ছিল সাদা গেঞ্জি। পিঠে ও হাতে একটি করে ব্যাগ। ফুটেজে তার তৎপরতা বিশ্লেষণ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনিদের শনাক্তে মনিরকেই এখন বড় উৎস মনে করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, সিসিটিভির ফুটেজের সঙ্গে কারও চেহারা হুবহু মিলে গেছে এমন একজন হলেন মনির হোসেন। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাছ থেকে হত্যাকা-ের বিষয়ে তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
সূত্র জানায়, সিসিটিভি ফুটেজে দেখানো ছবিটি যে তার, তা স্বীকার করেছে মনির। তিনি তখন ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলে বলে জানান। তবে অন্যদের ছবি দেখানো হলে তাদের তিনি চেনেন না বলে দাবি করেন। কিন্তু খুনের সময় তিনি ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছেন এমন ছবি ও ফুটেজ দেখানো হলে মনির আঁতকে ওঠেন।
মনির জানান, তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মচারী। সম্প্রতি স্ত্রীর মামলায় জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছেন। মনির চট্টগ্রামের বন্দরটিলা এলাকায় থাকেন। ওখানে তার ছোট ভাই রমজান আলী একটি কো¤পানিতে চাকরি করেন। চটগ্রামে কারাবন্দি থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে হাসান, মাসুদ ও সালাহউদ্দিন নামে তিন অপরাধীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনির এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন বলে দাবি করলেও জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িতদের তিনি সমর্থন করেন বলে জানান। তবে এ সময় খুনের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারা মনে করছেন, বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যা করতে মূল খুনি ঠিক ছয়টার দিকে রাস্তার কোনায় আসে। একই সময়ে মনিরও ঘটনাস্থলে চলে আসে। মাহমুদা খানম মিতু তার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ওই সড়কে ঢোকে মনির। এর আগে তিনি জিইসি মোড় থেকে মেইন রোড হয়ে সোফিয়ান হোটেলে গিয়ে নাশতা করেন।
এ সময় তাকে ক্রস করে যায় সবুজ গেঞ্জি পরা আরেক খুনি। ওই যুবক ফোনে সবাইকে সংগঠিত করে। তার সঙ্গে ইশারায় কথা বলতে দেখা যায় মনিরকে। তারপর সে হোটেলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কালো শার্ট পরা আরেকজন ঘটনাস্থলের দিকে যেতে থাকে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, মনির ওই হোটেলের পাশ দিয়ে ইশারা দিয়ে এদের ঘটনাস্থলে আসার ইঙ্গিত করে। এর ফলে সবাই একে একে আসতে থাকে। আর মনির বাবুল আক্তারের বাসার সামনে রোডে প্রবেশ করার পরপরই দেখা যায় মাহমুদা খানম মিতুও বেরিয়ে আসছেন। এ থেকে গোয়েন্দাদের ধারণা মনির আগেই প্রস্তুত ছিল। অথবা তাকে কেউ জানিয়ে দিয়েছে যে মিতু বাসা থেকে বের হচ্ছে।
জিজ্ঞাসাবাদকারী আরও এক কর্মকর্তা জানান, এ তথ্যের পর মনির বাসার রোডে প্রবেশ করে। ধারণা করা হয় পেছন থেকে মনিরই খুনিকে টার্গেট দেখিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে মূল নির্দেশনা তার কাছেই ছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এ তথ্য জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
এ কর্মকর্তা আরও জানান, মনির পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়লেও তার ফেসবুক আইডি রয়েছে। রয়েছে স্মার্টফোন। তার প্রযুক্তি ব্যবহার ভাবিয়ে তুলেছে গোয়েন্দাদের। তার মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ফেসবুক আইডির বৃত্তান্ত। গোয়েন্দাদের কাছে মিতু হত্যার রহস্য উন্মোচনে এ যুবক এখন বড় সূত্র হিসেবে গণ্য হচ্ছে।