সড়ক আইন-২০১৮ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা নেই। নতুন সড়ক পরিবহন আইনে মালিক-শ্রমিক, পথচারী সবার জরিমানা বেড়েছে।এটা জানানোর জন্য আরো বেশি প্রচারণা দরকার। আইন কার্যকর না হলে দণ্ড বাড়িয়ে লাভ নেই। এক্ষেত্রে মালিক, শ্রমিক, সরকার প্রাধান্য পেলেও সাধারণ যাত্রীদের প্রতিনিধিত্বের প্রাধান্য দেয়া হয়নি। তাছাড়া আইনের কিছু অংশের পরিবর্তন প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ আইনের ফলে সড়কে চাঁদাবাজি বাড়বে এমন আশঙ্কাও তাদের। বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আলম তালুকদার এ বিষয়ে বলেন, নতুন এই আইনে অনেক ফাঁক-ফোকর আছে বলে মনে হয়।
সাজা চালকের বেশি, মালিকের কম। আইন আগেও ছিল। তবে এই আইনটি হলিস্টিক (পরিপূর্ণ) আইন হয়নি। আইনে ডিটেইন কম শুধু শাস্তির কথা বেশি লেখা। নতুন আইন পুরান আইন বলে কথা না। প্রশ্ন হচ্ছে, আগের আইন শৃঙ্খলা এনেছে কতটুকু। তবে এই আইনে অনেক কিছু আছে। ফলে কিছুটা শাস্তির ভয় কাজ করবে। শাস্তি বেশি থাকায় চালকের মনে একটি ভয় কাজ করবে। আগে জরিমানা ছিল কম, এখন বেশি। এজন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরবে।
আগে ভয় কম পেয়েছে এখন বেশি ভয় পাবে। জরিমানা বেশি হবে। স্বাভাবিকভাবে একটু পরিবর্তন আসবেই।
‘নিরাপদ
সড়ক চাই’ নিসচা’র চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নতুন কোনো
কিছু হলে তার সমালোচনা হবে। কিন্তু এই আইনটি করা হয়েছে মানুষের দাবির
পরিপ্রেক্ষিতে। এবং এই আইনের আগে কোনোভাবে কোনো কিছু করা যাচ্ছিল না।
শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছিল না। চালকদের বলার পরও মোবাইল ফোনে কথা এবং বেপরোয়া
গাড়ি চালানো বলা বন্ধ করা যাচ্ছিল না। মালিকদেরকে সরকার অনুরোধ করেও কোনো
সমাধান করা যায়নি। আগে আইনে বিচার এবং জরিমানার ব্যবস্থা ছিল খুবই কম। এখন
যেহেতু অনেক অর্থদণ্ড দিতে হবে সেহেতু প্রত্যেকের টনক নড়বে।
আমি বলবো এই আইনের সবচেয়ে বড় দিকটি হলো এটা। সড়কে চাঁদাবাজি আগেও ছিল। এই আইনে সত্যিকার অর্থে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য এবং সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে এটা একটি উপযুক্ত আইন হয়েছে। এটাকে যদি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে অচিরেই এটা ফলপ্রসূ হবে। এই আইনের সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে পথচারি এবং যাত্রীদেরকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। যাত্রীরা যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে ওঠা নামা করবে সেটা তারা করতে পারবে না। যাত্রীরা যত্রতত্র রাস্তা পার না হয়ে এখন আণ্ডারপাস, ওভারপাস, জেব্রাক্রোসিং দিয়ে পারাপার হতে হবে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এই আইনটি যাত্রীবান্ধব এবং জনবান্ধব হয়নি। আমাদের পরিবহন সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে আইনের শাসন অনুপস্থিত ছিল। মূলত আইন প্রয়োগ করা হয়নি। এ অবস্থায় যখন একটি শক্তিশালী আইন হয় তখন এই আইন মেনে নেয়া সাধারণত একটু কষ্টকর হবে এটা সত্য। তবে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি কঠোর আইন দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সাধারণ মানুষের। কিন্তু এখানে দেখা গেছে অনেকটা বিলম্বে সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হলো। ফলে আমাদের হাতে যথেষ্ঠ সময় ছিল এই আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানো। বিশেষ করে চালক, হেলপার এবং শ্রমিকদেরকে জানানোর একটি সুযোগ ছিল। সেই সুযোগটি কিন্তু আমরা হারিয়েছি। বর্তমান আইনে চালকের মোবাইল ফোনে কথা বলার জরিমানা আগের তুলনায় অস্বাভাবিক। এই আইন সম্পর্কে বাস চালক, হেলপার, সার্জেন্ট তারা অনেকেই কিন্তু জানে না। এটা জানানো রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, সার্বিকভাবে আইনটি খুব যে খারাপ তা বলবো না। মোটামুটি হয়েছে। এখানে শুধু জরিমানা এবং সাজা বেশি থাকলেই যে গণ পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরবে এমনটা নয়। কিন্তু এটা সর্বাত্মক বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে শৃঙ্খলা ফিরবে কি ফিরবে না। আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা থাকতে হবে। জরিমানা এবং সাজার বিষয়টি ঠিক আছে। এটা বেশি হয় নি। কারণ সর্বোচ্চ সাজার বিধান রেখে যদি বাস্তবায়ন করা না হয় তাহলে তো কাজ হবে না। আমরা জরিমানা এবং সাজার বিধানের বিষয়ে ভাবতে রাজি না। আমরা চাইবো এটা যেন সর্বক্ষেত্রে সবসময় যেন কার্যকর থাকে। এবং এটা থাকলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। এছাড়া এই আইনের প্রচার প্রচারণার একটি বিষয় আছে।