প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন, একই কমিটির সভাপতিও। তাদের বিষয় ছিল , উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ভাঙ্গা নিয়ে। ভোলা থেকে এসেছিলেন নাদিম আহমেদ। তার অভিযোগ স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে। চট্রগ্রামের একজন মেয়রের বিরুদ্ধে দোকান উচ্ছেদের অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন কবির হোসেন। গণভবনের প্রবেশ পথে বসার ঘরে তারা সাক্ষাতের অপেক্ষার সময় নিজেদের অভিযোগের বিষয় জানান। এভাবে প্রতিদিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নালিশ নিয়ে আসছেন নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ।
কেউ আসছেন সাক্ষাৎ করতে আবার কেউ অভিযোগের চিঠি নিয়ে। গণভবনে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কয়েক জন জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিদিন অর্ধশতাধিকের বেশি মানুষ আসেন নানা অভিযোগ নিয়ে।
কেউ আবার দাবি দাওয়া নিয়েও উপস্থিত হন। কেউ কেউ আসেন নানা ধরণের সাহায্যের জন্য। সেখানে আসা অনেকে অভিযোগের চিঠি নিয়ে আসেন। চিঠি জমা দিয়ে চলে যান। গেটে জমা পড়া চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হয় গণভবনের ভেতরে। প্রধানমন্ত্রী সেসব চিঠি গুরুত্ব সহকারে দেখেন। অনেক সময় তার বিশেষ সহকারীদের ডেকে চিঠির অভিযোগের ভিত্তিতে নানা নির্দেশনা দেন। এ চিত্র শুধূ গণভবনের নয় একই চিত্র প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়েও। সেখানেও স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ পাঠানো হচ্ছে প্রতিদিন। কেউ স্বশরীরে অভিযোগ নিয়ে হাজির হন আবার কেউ ডাকযোগে চিঠির মাধ্যমে অভিযোগ জানান। গণভবনের মতো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও রয়েছে পাঠানো অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারি। সেখানে বাছাই করে ও অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে ফাইল আকারে পাঠানো হয়। এসব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারি ও আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, প্রতিদিনই প্রধানমন্ত্রীর কাছে শত শত চিঠি আসে। এসব চিঠিতে থাকে বিভিন্ন ধরনের দাবি ও আবদার। থাকে নানা ধরনের অভিযোগ।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়েও এ ধরনের অনেক চিঠি আসে। সেগুলো যথাযথ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। সম্প্রতি চিঠির পরিমানটা বেড়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আগেও নিয়মিত চিঠি আসতো। তবে শুদ্ধি অভিযানের পর থেকে চিঠির সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ চিঠি আসে স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নিয়ে। অনেক চিঠিতে দেখা গেছে, দলের একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। এতে তাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের আওতায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের এই সমস্ত নেতারা তাদের পরিচয় প্রকাশ করছেন। তবে কেউ কেউ পরিচয় গোপন করে শুধু তথ্য উপাত্ত দিচ্ছেন। তারা জানান, সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসছে স্থানীয় এমপিদের বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলো করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের বঞ্চিত এবং কোনঠাসা নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। কিন্তু বেশি অভিযোগ আসছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনঠাসা ও অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠি নিয়ে কাজ করেন এমন এক নেতা মানবজমিনকে জানান, চিঠিতে অনেক ধরনের অভিযোগ থাকলেও মূলত কয়েকটি বিষয় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগের কমিটি বাণিজ্য, বিভিন্ন অনুপ্রবেশকারী,অন্য দলের লোকদের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করানো এবং তাদেরকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা। সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে নানারকম দখলদারিত্ব কায়েম করা।
টেন্ডারবাণিজ্য
করা, টেন্ডারবাণিজ্যকে মদত দেয়া। নিয়োগ দেয়ার নাম করে বিভিন্ন লোকের কাছ
থেকে অর্থ আদায় করা। এছাড়াও রয়েছে, প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার
কাজে হস্তক্ষেপ করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্থ করা। সুনির্দিষ্ট
অপরাধীদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে তাদের জন্য থানায় তদবির করা। ১৪ই
সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলে শুদ্ধি
অভিযানের কথা বলেন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু
করে। এই অভিযানের পর থেকেই বেশি পরিমানে অভিযোগ আসছে প্রধানমন্ত্রী ও
আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী দলীয় সূত্র ও বিভিন্ন
গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেও দল ও সহযোগী সংগঠনের বিতর্কিত নেতাকর্মীদের তথ্য
সংগ্রহ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে আসা এ তালিকায়ও অনেক নেতাকর্মীর নাম
রয়েছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী কাউন্সিল কার্যক্রমে বিতর্কিতদের স্থান
দেয়া হবে না। এছাড়া বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যারা দলীয় নেতাকর্মী ও
সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী
ব্যবস্থাও নেয়া হবে। দলীয় সূত্র জানায়, তৃণমুল পর্যায়ে এই কার্যক্রম খুব
শিগগিরই দৃশ্যমান হবে।