মোদী সরকার বিরোধী দলের সাংসদরা জম্মু-কাশ্মীরে যেতে চাইলে বাধা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ জন এমপির একটি দলকে কাশ্মীরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে । আজ মঙ্গলবার দলটি কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে সেখানকার পরিস্থিতি বুঝবেন বলে জানানো হয়েছে। প্রতিনিধি দলের সদস্য বি এন ডান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবটাই ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে বাস্তব পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করব। গতকালই প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা এই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অজিত দোভাল তাদের কাশ্মীর পরিস্থিতি ব্যাখ্যাও করেছেন। তবে ভারতের বিরোধী নেতারা এই সফরকে নিয়ন্ত্রিত সফর আখ্যা দিয়েছে।

বিরোধী নেতাদের প্রতি মোদী সরকার কোনও সৌজন্যই দেখান নি। রাহুল গান্ধী থেকে সব বিরোধী নেতাকে কাশ্মীরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, এটি সরকারি সফর নয়। বিদেশি এমপিরা প্রত্যেকেই বেসরকারি ভাবে ভারতে এসেছেন। এই প্রতিনিধিদলের অনেকেই আবার অতি-দক্ষিণপন্থী, শরণার্থী-বিরোধী বলে পরিচিত দলের সদস্য। কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী এক টুইটে বলেছেন, ভারতীয় এমপিদের যখন কাশ্মীরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তখন ইউরোপের এমপিদের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর সফরকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে এটা খুবই ভুল সিদ্ধান্ত বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। ইউরোপীয় এমপিদের দলটিতে ব্রেক্সিট পার্টি, ল পেন’স পার্টি, বেলজিয়ামের ভিবি-র মতো অতি দক্ষিণপন্থী দলের এমপিরা রয়েছেন। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, এই বেসরকারি দলটি মূলত অতি দক্ষিণপন্থী ফ্যাসিবাদীদের, যাঁদের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক রয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, কেন আমাদের সাংসদরা কাশ্মীরে ঢোকার অনুমতি পান না। অথচ মোদী এদের স্বাগত জানান।  বিরোধীদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের মুখে পড়ে বিজেপি সরকারই বাছাই করা এমপিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে কাশ্মীরে পাঠাচ্ছে। যাতে তাঁদের ইতিবাচক রিপোর্টে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সওয়াল করতে সুবিধা হয়। কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং তার পরে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার পরে এই প্রথম কোনও বিদেশি প্রতিনিধিদল কাশ্মীরে গেল। তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ফারুক ও ওমর আবদুল্লাহসহ প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাকেই আটক করে রাখা হয়েছে। কাশ্মীরের বাইরে থেকে কোনও রাজনীতিক সেখানে যেতে গেলেও বাধা পাচ্ছেন। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশের অভিযোগ, এটা দেশের সংসদের অপমান। পিডিপি নেত্রী মেহবুবার অভিযোগ, কাশ্মীরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে বলে বোঝাতে মরিয়া সরকার অবিরাম কূটনৈতিক ভুল করছে। ফ্যাসিবাদী, অতি দক্ষিণপন্থী ও শরণার্থী-বিরোধী ইউরোপীয় এমপিদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কিছু দিন আগেই মার্কিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নয়াদিল্লির কাছে দাবি তোলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের কাশ্মীরে যেতে দেওয়া হোক। কারণ নয়াদিল্লি যা বলছে, সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট তার সঙ্গে মিলছে না। বিরোধীরা মনে করছেন, চাপ কাটাতে মার্কিন কংগ্রেসের বদলে নিজেদের বাছাই করা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের কাশ্মীরে নিয়ে গেল মোদী সরকার।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031