ঢাকা: মুক্তিযোদ্ধা গেজেট কিনতে বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অফিসে (সরকারি বিক্রয় কেন্দ্র দুই) এসেছেন মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ হোসেন পাটোয়ারি। তিন নম্বর সেক্টরের এই মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি চাঁদপুর। ২০০৫ সালের এই গেজেটটিতে তার নাম রয়েছে।
গেজেটটি হাতেও পেলেন তিনি। কিন্তু গোল বাঁধলো দাম নিয়ে। ১০ টাকার গেজেট কিছুতেই ১০ টাকায় ছাড়বেন না বিক্রয় কেন্দ্রের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ও খয়রাত হোসেন।
কিন্তু কতো দিতে হবে তাও স্পষ্ট করে বলছেন না তারা। মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ ১০ এর দ্বিগুণ ২০ টাকা তুলে দিলেন জাহাঙ্গীরের হাতে। হাতের সামনে টাকা তুলে ধরে তার সিনিয়র খয়রাত হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন জাহাঙ্গীর। গেজেট কিনতে আসা মুক্তিযোদ্ধার ওপরে তড়পে ওঠেন খয়রাত।
হাত নাচিয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে তাচ্ছিল্য করে বলেন, ২০০৫ সালের বই এখন নিতে এসেছেন। এখন তো পাওয়ার কথা না। আমরা পাই কয় কপি?
যেনো গেজেট কিনতে এসে মহাপাপ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা।
খয়রাত বলে যান, এক হাজার একশ’ ৬৯ জনের নাম আছে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে। এর মধ্যে এক হাজার বাদ দেন, ১৬৯ জন তো নিতে আসবেন। বাংলা কথা বোঝেন? আমার কথা বোঝার চেষ্টা করেন। আমি বই কয়টা পেয়েছি? আপনি তো ২০০৫ সালের বই ঠিকই পাইলেন।
এ সময় পাশ থেকে ফোড়ন কেটে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়েন জাহাঙ্গীর।
খয়রাত বলতে থাকেন, ২০০৫ সালের বই তখন নিবেন, এখন ২০১৬ সালে আসছেন কেন? ২০০৫ সালের বই তো এখন রাখার কথা না। এক কথায় যদি ‘নাই’ বলে দেই। পাঁচ হাজার বই ছাপা হয়েছে। সব মন্ত্রণালয়ে নিয়ে গেছে। আমারে দিয়েছে মাত্র পাঁচ কপি। আমি কি করবো? আমারে ১০ কপি দিলো আমি বিক্রি করলাম। মন্ত্রণালয়ের লোক জানে আমি এই টেবিলে কাজ করি। আমার ভাউচার ছাড়া বই যাবে না। তারপরও তারা ১৫ টাকার বই আমার কাছে দুই হাজার টাকা চায়। আমি ৫০০ টাকা বের করে দিলাম, তারপরও আমারে ১৫ টাকার বই দেয় নাই।
মুক্তিযোদ্ধার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে খয়রাত বলেন, মন্ত্রণালয়ে যান, দেখেন তারা কি বলে? আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করলাম। দেখেন এই ১০ টাকার বই একশ’ টাকার কমে আনতে পারবেন না।
অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন খয়রাত। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রমাণ দেখাতে জাহাঙ্গীরের কাছে ২০০৫ সালের রেজিস্ট্রার চান তিনি।
রেজিস্ট্রার বের করে খয়রাত হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকা রংপুর গত বছর নয়টা বই দিয়েছিলো। শেষ হবার পর এ বছরে পেয়েছি ১০টি। আমি যদি ১০টি বই পাই, আপনি কয়টি পাবেন? আপনার বিচার, আপনার কাছে দিলাম। আপনি তো মুক্তিযোদ্ধা। আপনার মন্ত্রণালয়ে জোর করতে পারবেন না, আমাদের কাছে এসে জোর করবেন কেন?’
এবার গলা আর একটু চড়িয়ে খয়রাত বলেন, আপনাদের বই রাখার কি দরকার আছে আমার। আমি যদি আপনার বই বিক্রি না করি সরকার কি আমাকে বেতন কম দেবে। আমি ৩০ হাজার টাকা বেতন পাইতেছি। আমাকে ৩০ পয়সাও কম দিবে না। তাহলে? সকাল ৯টার সময় আসি, সাড়ে ৩টায় চলে যাবো। কি দরকার আছে আপনাদের জন্য বইগুলো রাখার?
খয়রাতের এমন কথায় তাল দিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, জামা কাপড় খোলা বইগুলো (মলাট খুলে গেছে) আমরা ফেলে না দিয়ে সংরক্ষণে রাখি বস্তা ভরে। কারণ মানুষ বইগুলো চায়। মানুষ ঠেকে আসে। আমরা মানুষের কাছ থেকে দুই পয়সা পেয়ে বইগুলো দেই। তার মানে এই নয় ১০ টাকা দামের জায়গায় ২০ টাকা দিবেন?’
জবাবে মুক্তিযোদ্ধা বলছেন, সরকার লাভবান হোক, আপনারাও লাভবান হন।
এবার সরাসরি কথা পাড়েন খয়রাত। অকপটে বলেন, সব কথা বাদ দিয়ে বলি, আমাদের ইফতারের জন্য কিছু পয়সা দিয়ে যান। আর কি কমু, আপনাকে তো কইতেছি না দিতেই হবে।
অসহায় মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আমার কাছে সীমিত পয়সা।
কিন্তু তাতে মন ভেজে না খয়রাতের। ইফতারের নামে শেষ পর্যন্ত ১০ টাকার বইয়ের দাম ৫০ টাকা নিয়ে গেজেট ছাড়েন তিনি। কর্মসূত্রে রংপুরে থাকেন মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ পাটোয়ারি। ওতো দূর থেকে এসে ঘুষখোর খয়রাতের ফায়সালা না মেনে নিয়ে উপায় থাকে না তার।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৬
এফবি/জেডএম