পরিবার-পরিকল্পনার ওপর আয়োজিত দুই দিনের জাতীয় যুব সম্মেলনের বক্তারা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য যেন যুবকেরা পায় সে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ।
সোমবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সিরাক-বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইয়ুথ হেলথ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (বিহান) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে চতুর্থ জাতীয় যুব সম্মেলনের আজ ছিল শেষ দিন। এ সম্মেলনে অংশ নেয় সারাদেশ থেকে আসা প্রায় ৪০০ কিশোর- কিশোরী ও তরুণ।
সমাপনী বক্তব্যে সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং তরুণ ও কিশোর-কিশোরীদের জানা খুবই প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার যুবদের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাতে কাজ করছে। তবে এই বিষয়ে কাজ এখনো অনেক বাকি।’
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘বাল্যবিবাহ ও অল্প বয়সে মা হওয়া থেকে বিরত রাখতে যুবকদের রোল মডেল হতে হবে। যুবকদের জন্য পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক আলোচনা খুবই দরকার। এই কনফারেন্সের মাধ্যমে আমরা যোগ্য তরুণদের খুঁজে পেতে পারি, যারা এই সম্পর্কে উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে।’
সিরাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এবং সম্মেলনের সেক্রেটারি জেনারেল এস এম সৈকত বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশই তরুণ জনগোষ্ঠী। আর এর সুফল পেতে হলে উপযুক্ত সময় তরুণদের তাদের চাহিদা সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলার সুযোগ দিতে হবে। তাদের জন্য সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের মনের কথা বলার মতো জায়গা তৈরি করতে হবে। প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে সেখানে কিশোরীদের বয়সন্ধিকালীন প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়া হবে। আর এটা খোলা রাখতে হবে স্কুলের সময়ের পরও।
সম্মেলনে তরুণদের বক্তব্যে উঠে আসে যে, স্কুলে বযয়োসন্ধিকাল নিয়ে যে চ্যাপ্টারগুলো রয়েছে সেগুলো শিক্ষকরা পড়ান না। আর বাসায় এ গুলো নিয়ে আলোচনা করাও যায় না। শিক্ষকের কাছে ঋতুস্রাব ও স্বপ্নদোষ নিয়ে জানতে চাইলে তারা মনে করে কোনো দোষের বিষয় জিজ্ঞাসা করছি। ক্লাসের অন্যরাও হাসাহাসি করে। পিরিয়ড নিয়েও বলা যায় না। পরিবারে সদস্যের কাছে জানতে চাইলে বলে, এইটা গোপন কথা।
সরকারি তুলারাম কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, তরুণদের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তাদের বয়োসন্ধিকালীন পরিবর্তনের বিষয়ে জানাতে হবে।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী সাবিহা বলেন, আমার যখন প্রথম পিরিয়ড হয় তখন খুব ভয় পেয়েছি। ভাবলাম কী হলো আমার। এরপর ফুফুর সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে ভয়ে ভয়ে বললাম, ফুফু আমাদের এরপর বুঝিয়ে বললেন। আসলে এ বিষগুলো আমাদের আগে থেকেই জানানো প্রয়োজন।
দুই দিনব্যাপী এই যুব সম্মেলনে অংশ নেয় সারাদেশ থেকে আসা প্রায় ৪০০ কিশোর- কিশোরী ও তরুণ। অংশগ্রহণকারীদের জন্য ছয়টি প্ল্যানারি সেশন, সাতটি প্যারালাল ট্রেনিং সেশনসহ বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন ছিল। সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারীদের সার্টিফিকেট দেয়া হয়।
সিরাক-বাংলাদেশ এর সাথে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউকেএইড, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ, প্লান ইন্টারন্যাশনাল, রাইট হেয়ার রাইট নাও বাংলাদেশ, পপুলেশন অ্যাকশন ইনটারন্যাশনাল, জেপাইগো, ডিজিএফপি, মেরী স্টোপস বাংলাদেশ, ইউএনএফপিএ এর সেশন আয়োজন ছিল।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সাইন্স বিভাগের চেয়ারম্যন অধ্যাপক মাইনুল ইসলাম, ইউএনএফপিএর হেলথ সিস্টেম স্পেশালিস্ট ডা. দেওয়ান মোহাম্মাদ এমদাদুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেনন অ্যাডলোসেন্ট হেলথ অ্যান্ড এইচএসএস স্পেসালিস্ট এএসএম সায়েম।