প্লাবিত হয়েছে দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারী বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ গতকাল দুপুরে আবারও জোয়ারের পানিতে । এসময় ব্যবসায়ী এবং বাজারে আসা ক্রেতারা অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েন। স্থবির হয়ে যায় বেচাকেনা। কেবলমাত্র জোয়ারে পানিতেই অনেক স্থানে হাঁটু পানি উঠে যায়। এসময় ব্যবসায়ীরাও দিশেহারা হয়ে পড়েন। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, জোয়ারের পানি প্রবেশ ঠেকাতে দোকানের প্রবেশমুখ ও ফ্লোর উচু করেছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। তারপরেও প্রতিবছরই বাড়ছে জোয়ারের পানির উচ্চতা। ফলে নিচু এলাকার কিছু কিছু দোকান-গুদামে পানি প্রবেশ করেছে। এদিকে বিকেলে নগরীতে একটানা প্রায় তিন ঘণ্টা বৃষ্টিপাত হয়। বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এ বর্ষণ। ফলে শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। কোথাও হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা। চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের জুনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনায় স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে। সেই সময় বলা হয়, জোয়ারের পানিতে আর ডুববে না চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। কিন্তু স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে এখনো পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জোয়ারের পানিতে চাক্তাইয়ের চালপট্টি, শুটকিপট্টি, মকবুল সওদাগর রোড ও আছাদগঞ্জ, হামিদউল্লাহ বাজার ও আশপাশের নিম্নাঞ্চল হাঁটু পর্যন্ত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। যতদ্রুত সম্ভব চাক্তাই খালের দুই পাড় দখলমুক্ত করে খালকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতে হবে। আমরা বলে আসছি-কর্ণফুলী ড্রেজিং করে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর কথা। ড্রেজিং কাজ শুরু হওয়ায় এখন শুনতে পাচ্ছি কর্ণফুলী নদীর তলায় প্লাস্টিকের কারণে ড্রেজার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তার মানে জোয়ারের পানি থেকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা থেকে ব্যবসায়ীদের সহসা মুক্তি মিলছে না।
জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, জোয়ারের পানি প্রতিরোধে সিডিএ স্লুইচ গেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সেটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু সমস্যা হলো-এখন পর্যন্ত কাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। ধীরগতির কারণে ব্যবসায়ীরা স্লুইচ গেটের সুফল কখন পেতে পারেন, সেটিও বলা মুশকিল। শুধুমাত্র জোয়ারের পানিতেই চাক্তাই খাতুনগঞ্জের নিম্নাঞ্চল হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে যদি বৃষ্টির পানি যোগ হয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা বড়সড় লোকসানের মুখে পড়েন। গত ২০১৭ সালের জুন জুলাই মাসে ভারী বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানিতে প্রায় তিনশত কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েন।
এদিকে পঞ্জিকার পাতা থেকে ১৮দিন আগে বিদায় নিয়েছে বৃষ্টির মৌসুম বর্ষা। অথচ প্রকৃতির বুকে বর্ষণ অব্যাহত আছে। সর্বশেষ গতকালও নগরীতে একটানা প্রায় তিন ঘণ্টা বৃষ্টি হয়। এসময়ে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস রেকর্ড করেছে ৪৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। বৃষ্টি যখন শুরু হয় তখন জোয়ারের পানিতে পরিপূর্ণ ছিল নগরীর খালগুলো। বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানি একাকার হওয়ার কারণেই দীর্ঘস্থায়ী হয় জলজটও। আজ মঙ্গলবারও নগরে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবিষয়ে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা শেখ ফরিদ আহমেদ দৈনিক আজাদীকে জানান, আজ আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সে সাথে কোথাও কোথাও অস্থায়ী দমকা বাতাসের সাথে সাময়িকভাবে হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।’
এদিকে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃষ্টি এবং জোয়ারের কারণে এনায়েত বাজার মোড়, লাভলেইনস্থ স্মরণীকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে, রাইফেল ক্লাব এলাকা, বাদুরতলা, শুলকবহর, আড়াকান সড়কের বহাদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর, ওয়াসা, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, হালিশহর, ছোটপুল, চকবাজার, কাপাসগোলা, গণি কলোনি, কালাম কলোনি, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাইসহ বিভিন্ন এলাকায় জলজট ছিল।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031