ব্যস্ততা রাজধানীর শাহবাগে রাজ্যের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যাত্রীদের ভিড়। ওপার থেকে সিগন্যাল পেরিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে একটার পর একটা বাস। আর তাতে ওঠার জন্য যাত্রীদের রীতিমতো যুদ্ধ। ভিড় ঠেলে অনেকেই বাসে উঠতে নাস্তানাবুদ। সপ্তাহের শেষ দিন। ২৯ আগস্ট, বৃহস্পতিবারের চিত্র এটি।
রণে ভঙ্গ দিয়ে বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য কেউ কেউ ইতিউতি করেন। দেখতে পান মোটরসাইকেলের ড্যাশ বোর্ডে স্মার্টফোন রেখে যাত্রীদের অপেক্ষায় রয়েছেন চালকেরা। তাদের কাছে দাঁড়িয়ে এক যাত্রী অ্যাপে গন্তব্য লিখে সার্চ করেন। একজন চালক অনুরোধ গ্রহণ (রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট) করেন। ফোন করে দেখতে পান, চালক অদূরেই দাঁড়িয়ে। তিনি তার কাছে যান। চালক বলেন, ‘কোথায় যাবেন?’ যাত্রী গন্তব্য বললে তিনি বলেন, ‘কত দিবেন?’
যাত্রী কিছুটা অবাক হন। বলেন, ‘অ্যাপে যা ওঠে তাই তো পাবেন।’
চালক এবার অসম্মতি জানান। বলেন, ‘অ্যাপে হবে না ভাই। কল কেটে দিয়ে যাবো। বলেন কত দিবেন?’
যাত্রী এবার বিরক্তির সুরে বলেন, ‘এটা কেমন কথা? কল দিলাম অ্যাপে যাবো বলে। আপনি এখন ভাড়া নিয়ে দরকষাকষি করছেন কেন?’
এবার চালকের জবাব, ‘অ্যাপে কাজ নাই। নিজেরা কষ্ট কইরা গাড়ি চালাইয়া পাঠাওরে টাকা দেবো কেন? গেলে চলেন।’
উবার, পাঠাও, সহজ, পিকমি, ও-ভাইয়ের মতো প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানের আওতায় ঢাকায় চলছে রাইড শেয়ারিং। শুরুতে এটি নিয়ম মেনে অ্যাপের ভিত্তিতে পরিচালিত হলেও এখন একশ্রেণির চালকের বেশি আয়ের আশায় এটি প্রায় ভেঙে পড়েছে। অ্যাপ রেখে এখন তারা ‘খ্যাপে’ ঝুঁকছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশার মতো চুক্তিতে গন্তব্যে যাত্রী পৌঁছে দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে, যা দিনদিন বাড়ছে। এতে বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। ভাড়াও গুনতে হচ্ছে বেশি। তার ওপর যাত্রীর পছন্দের গন্তব্যে পৌঁছাতেও আপত্তি থাকে চালকদের।
অ্যাপ ছাড়া যাত্রী তোলায় কে উঠছে সেই তথ্য থাকছে না কোথায়। এতে কোনো নির্জন স্থানে নিয়ে চালক যেমন যাত্রীর ক্ষতি করতে পারেন, তেমনি চালকও যাত্রীর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। গত ২৫ আগস্ট দিবাগত রাতে মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। মিলন নামে এক বাইকারকে খুন করে তার মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে একজন দুর্বৃত্ত। পুলিশ বলছে, খুনি যাত্রীবেশে মিলনের বাইকে চড়েছিল। কিন্তু তারা এখনো খুনিকে শনাক্ত করতে পারেনি। যদি অ্যাপের মাধ্যমে ভাড়ায় ওই যাত্রীকে নেওয়া হতো, তাহলে তার নাম-পরিচয়সহ প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া সহজ হতো। কিন্তু চুক্তিতে তাকে তোলায় কোনো তথ্যই নেই কারো কাছে।
২০১৬ সালে রাইড শেয়ারিং সেবা ঢাকায় চালু হয়। সহজে ও নির্ঝঞ্জাটভাবে গন্তব্যে পৌঁছানোর সুবিধা থাকায় ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে। পরে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এদেরকে নীতিমালার আওতায় আনতে উদ্যোগী হয়। প্রণয়ন করা হয় রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭, যা গেল বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। কার্যকর হয় ওই বছরের মার্চ থেকে।
নীতিমালা অনুযায়ী প্রাথমিক তালিকাভুক্তির পর চূড়ান্ত নিবন্ধন নেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ১২টির মধ্যে মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান সব শর্ত মেনে চূড়ান্ত অনুমোদনের সনদ সংগ্রহ করেছে। বিস্ময়কর হলেও এর মধ্যে নেই উবার, পাঠাও, সহজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা এখনো শর্তপূরণ করতে পারেননি বলে চূড়ান্ত অনুমোদন জোটেনি। অথচ কার্যক্রম ঠিকই চালু আছে।
বিআরটিএ বলছে, নীতিমালা করার পরেই তাদেরকে
চূড়ান্ত নিবন্ধন করার ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এটা পুরোপুরি অটোমেশন
প্রক্রিয়া। অনলাইনেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া যায়। শর্তপূরণ করলে
অনলাইনে পাওয়া যাবে সনদও। কিন্তু বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কেন এখনো এতে আগ্রহী
হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ
মাহবুব-ই-রাব্বানী এই সময়কে বলেন, ‘কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। আমরা তাদের কিছুটা
সময় দিচ্ছি। এখনই চাপ দিচ্ছি না। তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তারা নিবন্ধন
না নিলে আমরা চাপ দিবো।’
সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, নীতিমালায় উল্লিখিত কিছু বিষয়ের পরিবর্তন
চায় প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণে কিছু দাবি
নিয়ে বিভিন্ন মহলে দেন-দরবার করছেন। এটি সুরাহা না হলে তারা নিবন্ধন না
নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।
এছাড়া ভাড়া নিয়েও চলছে যাচ্ছেতাই অবস্থা। যার যেমন খুশি ভাড়া রাখছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ নীতিমালায় বলা আছে, সবার ভাড়া হবে অভিন্ন। নীতিমালা পুরোপুরি কার্যকর হলে ভাড়াতেও শৃঙ্খলা ফিরতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সিএনজি অটোরিকশার নৈরাজ্য এখন অ্যাপে
মোটরসাইকেল এবং প্রাইভেট কারের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং সেবা দেওয়া হচ্ছে
ঢাকায়। এই সার্ভিসের আওতায় যাত্রী সেবার পাশাপাশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর
পণ্য গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কাজটিও হচ্ছে রাইড শেয়ারিংয়ের
মাধ্যমে।
নীতিমালা অনুযায়ী, রাইড শেয়ারিংয়ে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য তিনটা ধাপ রয়েছে। ধাপ তিনটি সম্পূর্ণ হলেই অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন রাইড শেয়ারিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে নোটিফিকেশন চলে যায়। তারা ঘরে বসেই সার্টিফিকেট তুলে নিতে পারে।
এ ব্যাপারে কথা হয় বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রাব্বানীর সঙ্গে। তিনি এই সময়কে বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য ১৭টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন বিআরটিএতে জমা পড়ে। রাইড শেয়ারিং সার্ভিস যেহেতু ডিজিটাল পরিষেবা তাই অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধনের কাজটি শুরু হয়। এজন্য বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল চালু করে। বিআরটিএ-তে রাইড শেয়ারিং মডিউল যুক্ত করা হয়েছে। এখন রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো তাদের অবস্থান থেকে আমাদের কাছে আবেদন করে। আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করি। তারপর সব কিছু সঠিক থাকলে অনুমোদন দেওয়া হয়।
রাইড শেয়ারিংয়ে এনলিস্টেড সার্টিফিকেট থাকতে হবে
রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। একটি হচ্ছে রাইড
শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত সনদ থাকতে হবে। অন্যটি ওইসব
প্রতিষ্ঠানের যেসব গাড়ি আছে তাদের জন্য একটা সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়।
যেটা রাইড শেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টেড সার্টিফিকেট।
শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রাব্বানী বলেন, কোনো কোম্পানি রাইড শেয়ারিং সেবা
দিতে চাইলে তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যক মোটরযান নিয়ে শুরু করতে হয়। ঢাকা
মহানগরীতে যদি কেউ সেবা দিতে চায় তবে তাদেরকে নিজস্ব ১০০টি যান থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘পদ্ধতিটা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, আমরা কোম্পানি হিসেবে অনুমোদন দিলাম। এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত সার্টিফিকেট প্রিন্ট হবে না, যতক্ষণ না ১০০টি গাড়ি তাদের নামে নিবন্ধিত হয়।’
চূড়ান্ত অনুমোদনের ক্ষেত্রে করণীয়
বিআরটিএর সার্ভিস পোর্টালে প্রথম পর্যায়ে আবেদন করেছিল ১৭টি। এখন আছে ১৩টি।
এর মধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ৪টি
প্রতিষ্ঠান আবার চূড়ান্ত অনুমোদনও নিয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑপিকমি লিমিটেড,
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড, ওভাই সলিশনস লিমিটেড ও সেজেস্টো
লিমিটেড। এছাড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডাল তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য
প্রয়োজনীয় যানগুলোর নিবন্ধন করে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। বাকি সাতটি
প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার জন্য যে ধরনের শর্তপূরণ প্রয়োজন তা এখনো
করতে পারেননি। তারা চেষ্টা করছে।
পুলিশের সঙ্গে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের ইন্টিগ্রেশন লাগবে
রাইড শেয়ারিংয়ে কোনো যাত্রী বা চালক যদি দুর্ঘটনাকবলিত হন বা বিপদে পড়েন
তাহলে তিনি প্রতিকার কী করে পাবেন? জবাবে বিআরটিএর ওই কর্মকর্তা বলেন,
‘আমাদের নীতিমালার মধ্যে আছে অভিযোগ দায়ের ও নিষ্পত্তির গতিবিধির
পর্যবেক্ষণ। এটা অ্যাপসের মধ্যেই থাকবে। এসওএস বাটন থাকবে, যেটি ৯৯৯ বাটন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে কাজটি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে
রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ইন্টিগ্রেশন লাগবে। এখানে মোটরযান
চালকের তথ্য এবং যাত্রীদের জিপিএস লোকেশন থাকবে। ফলে যাত্রী বা চালক বাটন
প্রেস করামাত্রই কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারবে কোথায় দুর্ঘটনাটা ঘটেছে। এতে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারবেন।’
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ব্যবস্থা
রাইড শেয়ারিং নীতিমালায় বলা আছে, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাড়া হবে
অভিন্ন। নীতিমালায় বলা আছে প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ৮৫ টাকা। এরপর প্রতি
কিলোমিটারের জন্য ৩৫ টাকা। প্রতি দুই মিনিটে অপেক্ষমাণ চার্জ সাড়ে ৮ টাকা।
কলের জন্য চার্জ ২০ টাকা। অথচ কোনো প্রতিষ্ঠানই মানছে না এই নিয়ম।
যদি কেউ আইন না মেনে বেশি ভাড়া নেয় সে ক্ষেত্রে বিআরটিএ কী ব্যবস্থা নেবে- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রাব্বানী বলেন, নীতিমালায় ভাড়ার একটা কাঠামো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এই কাঠামো মেনেই অ্যাপের মাধ্যমে ভাড়া নির্ধারিত হয়। কেউ যদি বেশি ভাড়া নেয় তবে সেখানে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানও নিষ্পত্তি করতে পারে। তারা যদি নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয় তাহলে বিআরটিএ হস্তক্ষেপ করবে। তাদের কার্যক্রমের গতিবিধি লক্ষ্য রাখার জন্য আমাদের এখানেও একটা অ্যাপস থাকবে। আমরা দেখতে পারব কতগুলো অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে, কতগুলো তারা নিষ্পত্তি করতে পেরেছে এবং কতগুলো ঝুলে আছে।’
অ্যাপস বাদে রাইড শেয়ারিং করা যাবে না
অ্যাপস ছাড়াও রাজধানীতে অনেক চালক চুক্তিভিত্তিক যাত্রী পরিবহন করছে। সেবা
গ্রহীতাদের কাছ থেকে নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে অতিরিক্ত ভাড়া
আদায়, নির্ধারিত গন্তব্যে না যাওয়া এবং নিরাপত্তাহীনতা। এক্ষেত্রে করণীয়
কী জানতে চাওয়া হলে শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রাব্বানী বলেন, ‘যাত্রীদেরই বেশি
সচেতন হতে হবে। অ্যাপ ছাড়া যাত্রী পরিষেবা নেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে মনে
রাখতে হবে অ্যাপ ছাড়া কোনো যাত্রী রাইড শেয়ারিং সেবা নিলে পথিমধ্যে যদি
দুর্ঘটনা ঘটে তবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার পাবেন না। আমরা এ
ব্যাপারে কোনো দায় নেবো না।’
অ্যাপসে জরুরি সেবা
রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে এসওএস ‘৯৯৯’ নামে একটি বাটন যোগ করা বাধ্য করে
দিয়েছে বিআরটিএ। যে বাটন চাপলে চালকের সব তথ্য এবং যাত্রীর জিপিএস লোকেশন
সরাসরি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যাবে। যাত্রাপথে যদি কোনো সমস্যার সৃষ্টি
হয় তখন এই বাটন চেপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেবা নেওয়া যাবে। এই
পদ্ধতিতে বিআরটিএ বলছে ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেম। রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর
ছাড়পত্র পেতে গেলে অ্যাপে এসওএস বাটন ৯৯৯-এর সুবিধা আছে কি না সেটা খতিয়ে
দেখছে বিআরটিএ।
যা আছে নীতিমালায়
ব্যক্তিমালিকানাধীন হালকা মোটরযান যেমন মোটরসাইকেল, মোটরকার, জিপ,
মাইক্রোবাস ইত্যাদি যানবাহন ব্যক্তি বা একক পরিবার ব্যবহৃত হয়। এসব যান
ব্যক্তির চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত সময়ে ভাড়ার বিনিময়ে যাত্রী বহনের সুযোগ
দিলে যানজট, শ্রমঘণ্টা এবং জ্বালানির অপচয় রোধ হবে। মোটরযানের মালিক আর্থিক
সুবিধাও পাবেন। সেজন্য ২০১৭ সালে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন
করা হয়।
নীতিমালায় বলা আছে, রাইড শেয়ারিং সেবা দিতে হলে ব্যক্তিগত যানের চালককে
একটি রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত হয়ে সেবা দিতে হবে।
এজন্য গাড়ির মালিককে ‘রাইড শেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট’ সার্টিফিকেট
গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এনলিস্টমেন্ট
সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হবে।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সেবা দিতে গেলে ঢাকায় ১০০, চট্টগ্রামে ৫০ এবং দেশের অন্যান্য শহরে ২০ জন মোটরযান মালিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকতে হবে। এসব চালক নির্ধারিত স্ট্যান্ড/অনুমোদিত পার্কিং স্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে যাত্রী সংগ্রহের জন্য অপেক্ষমাণ থাকতে পারবে না। অর্থাৎ যাত্রী ওঠানামা ব্যতীত মোটরযানকে চলাচলরত থাকতে হবে।
এ নীতিমালার অধীন একজন মোটরযান মালিক মাত্র একটি মোটরযান রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় পরিচালনার অনুমতি পাবেন।
রাইড শেয়ারিং অ্যাপে জরুরি সেবা ৯৯৯ এবং এসওএস সেবার বাটন থাকতে হবে। এই সেবাদাতা সংস্থাগুলো যাত্রীদের যথাযথ সেবা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে।
বিআরটিএর ওয়েবসাইট এবং রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাপসে অভিযোগ দায়ের এবং নিষ্পত্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে।
রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় চলাচলকৃত ব্যক্তিগত মোটরযানের ভাড়া ‘ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন ২০১০ অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়া অপেক্ষা বেশি হতে পারবে না। তবে ভাড়া সংক্রান্ত যাত্রী অসন্তোষ সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে সরকার ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে।
এই নীতিমালায় আরো উল্লেখ রয়েছে যে, চালকের যানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন এবং ইনসিওরেন্স এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স হালনাগাদ থাকতে হবে। সেবা দেওয়ার সময় ট্রাফিক আইন মেনে চলার পাশাপাশি যাত্রীদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ করা, ধূমপান কিংবা নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, ঢাকার বাইরের কোনো গাড়ি রাজধানীতে এসে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস দিতে পারবে না। তবে ঢাকাসহ নিকটবর্তী ছয়টি জেলা-মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জের কোনো গাড়ি ঢাকায় সেবা দিতে পারবে না। তবে ঢাকার গাড়ি এসব জেলাগুলোতে সেবা দিতে যেতে পারবে।