প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানি আয় আরো বাড়াতে নতুন পণ্য সংযোজন এবং নতুন বাজার অনুসন্ধানের জন্য রপ্তানিকারকদের আহ্বান জানিয়েছেন । গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০১৬-১৭ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা ইয়াসমিন, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে আমরা যে পণ্যগুলো রপ্তানি করছি, সেখানে আপনাদের কাছে আরেকটি অনুরোধ থাকবে, আমাদের নতুন নতুন পণ্য সংযোজন করতে হবে রপ্তানির ক্ষেত্রে। পণ্য সংযোজনের জন্য আমাদের বহুমুখীকরণ করতে হবে। বাজার খুঁজে
বের করতে হবে। সেই সঙ্গে পৃথিবীর কোন দেশে কোন জাতীয় পণ্যের চাহিদা বেশি সেই দিকটায় বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। পাশাপাশি নতুন দেশে নতুন পণ্য খুঁজে যাতে বের করতে পারি আর রপ্তানি করতে পারি, আমাদের বাজারটা যাতে আরো সমপ্রসারিত হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারদের দেশের রপ্তানি খাতের সমপ্রসারণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বলেন, যেই দেশের অ্যাম্বাসেডর সেই দেশে কোন পণ্যের চাহিদা রয়েছে সেই পণ্যের মধ্যে কোন কোনটি আমাদের নিজেদের দেশে উৎপাদন করতে পারি, রপ্তানি করতে পারি এবং সেই সুযোগটা যাতে সৃষ্টি হয় তার জন্য তারা যথাযথ ভাবে কাজ করবেন এবং আমাদের উৎপাদিত পণ্যগুলি সে দেশের মানুষের সামনে যেন তুলে ধরা যায় সে ব্যবস্থাও তারা নেবেন।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২০২টি দেশে প্রায় ৭৫০টি পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে ৪৬.৮৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করেছে। এই সময়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ১৪.৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৭০.৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
পণ্য উপাদন ও বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদর ব্যাংকে ঋণ নিতে গেলে অনেক উচ্চহারে সুদ দিয়ে ঋণ নিতে হয়, ডাবল ডিজিটে। ইতিমধ্যে আমরা নির্দেশ দিয়েছি এটা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। কিছু কিছু ব্যাংক মেনেছে, কিছু কিছু ব্যাংক মানেনি এখনও। তবে সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। তাদের যা যা সুযোগ সুবিধা দেয়া সেটাও আমরা করে দিচ্ছি। কাজেই এটাকে আমরা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কাজও করছেন তারা। যখনই আমরা বিনিয়োগের কথা বলি। তখন বলি একটা দক্ষ যুব সমাজ আছে। এই যুব সমাজই আমাদের শক্তি। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে দেশে ও বিদেশে কাজে লাগবে। সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, কাজেই এটা বলি, সবসময়ই ব্যবসায়ীদের পাশে আছি। আমরা ব্যবসা করতে আসিনি। ব্যবসায়ীদের সবরকম সহযোগিতা দিয়ে দেশ যেন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয় সে ব্যবস্থাই সরকার করছে বলে জানান তিনি।

এ সময় একযুগ আগে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিল মোট জিডিপির ২৬ শতাংশ। এখন সেটা ৩১.৫০ শতাংশ। তখন বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল ১৪.৮ বিলিয়ন ডলার। এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ৭০.৮ বিলিয়ন ডলার। কাজেই বুঝতে পারেন বেসরকারি খাতকে আমরা কত সুযোগ-সুবিধা এবং কত রকমের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমাদের সরকার আসলে ব্যবসাবান্ধব সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে কিন্তু আমাদের অর্থনীতি পরনির্ভরশীল না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। আমাদের উন্নয়ন বাজেটের ৯০ শতাংশই নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হয়। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.১ শতাংশ; চলতি অর্থবছরে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮.২ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অংকের ঘরে নিয়ে যেতে সক্ষম হবো বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। প্রবৃদ্ধির যখন উচ্চহার হয় আর মূল্যস্ফীতি তার থেকে কম থাকে তখন অর্থনীতির সুফলটা তৃণমূল বা সাধারণ মানষের কাছে পৌঁছায়।
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান ও উৎপাদন এবং আমদানি করে গ্যাসের সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শিল্পায়নের জন্য আমরা পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি। কারণ আমাদের কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সমগ্র বাংলাদেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছি।
আমি একটিই অনুরোধ করব আপনাদের যে, শিল্পাঞ্চল আপনারা গড়ে তুলবেন এবং শিল্পোন্নয়ন করবেন। সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ এ বিষয়টার দিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে দেশের রপ্তানি খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২৮টি ক্যাটাগরিতে ৬৬টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০১৬-১৭-এর ২৯টি স্বর্ণ, ২১টি রৌপ্য এবং ১৬টি ব্রঞ্জ ট্রফি প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সেরা রপ্তানিকারকের পুরস্কার পেয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ৫ প্রতিষ্ঠান। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রপ্তানিতে অনবদ্য ভূমিকা রাখায় দেশের শীর্ষ এ গ্রুপকে স্বর্ণসহ পাঁচ রপ্তানি পদক দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে রপ্তানি পদক গ্রহণ করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী, প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা, আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরএন পাল, অলপ্লাস্ট বাংলাদেশ লিমিটেড এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সাঈদ হোসেন চৌধুরী ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) উজমা চৌধুরী। বর্তমানে বিশ্বের ১৪১টি দেশে প্রাণ-আরএফএল এর পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ সবসময় ক্রেতাদের চাহিদানুয়ায়ী পণ্য তৈরি করে থাকে। সেরা রপ্তানিকারক পদক প্রাপ্তিতে আমরা গর্বিত।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031