চট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্বমানের বন্দরে পরিণত করার পথে অগ্রসর হবে কথা ছিল প্রতি বছর চারটি করে সভা করে বন্দর উপদেষ্টা কমিটি । এই হিসেবে গত আট বছরে সভা হওয়ার কথা ছিল ৩২টি। অথচ সভা হয়েছে মাত্র ১২টি। ১৩তম সভা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর। বন্দর উপদেষ্টা কমিটির এই সভাকে ঘিরে ইতোমধ্যে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সদস্য সংখ্যা। পুনঃগঠিত কমিটিতে প্রথমবারের মত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বাংলাদেশ শিপহ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটরস এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিকে। প্রত্যাশা পূরণ থেকে বহু দূরে থাকলেও ভবিষ্যতে এই কমিটি বন্দরকে সঠিক পথ দেখাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সমাধানের পথ খুঁজে বের করা, বন্দরকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন লক্ষ্যকে সামনে রেখে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে সভাপতি করে বন্দর উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। এর বাইরে চট্টগ্রামের সব সাংসদ, শিপিং সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায়িক সংগঠন, রাজনৈতিক ও অন্যান্য সংগঠন এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ কমিটির সদস্য। কমিটির কার্য পরিধির মধ্যে রয়েছে বন্দর ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করা, বন্দর পরিচালন ও কর্মসম্পাদন পর্যালোচনা এবং বন্দর ব্যবহারকারিদের সাথে কার্যক্রম পর্যালোচনা, ব্যবহারকারি ও বন্দরের সাথে সম্পর্কিত সরকারি দপ্তরসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ প্রণয়ন এবং পরামর্শ প্রদান করা, বন্দর সার্ভিসসমূহের পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করার পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা, বন্দর কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত সরকারি সার্কুলার, আইন ও বিধি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলে সেক্ষেত্রে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করা।
বন্দরের কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে গঠিত এই কমিটিতে আগে সদস্য সংখ্যা ছিল ৫৪ জন। আগেকার প্রজ্ঞাপন বাতিল করে গত ৩ আগস্ট জারি করা নতুন প্রজ্ঞাপনে সদস্য সংখ্যা করা হয় ৬০ জন। বার্থ অপারেটরদের সংগঠন-বার্থ অপারেটরস, শিপহ্যান্ডলিং অপারেটরস এন্ড টার্মিনাল অপারেটরস এসোসিয়েশন ইত্যাদি সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে নিয়োজিত অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডকে ইতিপূর্বে উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করা হয়। সাইফ পাওয়ারটেককে কমিটির সদস্য করা হলেও বছরে অন্তত চার কোটি টন পণ্য হ্যান্ডলিংকারীদের কোন প্রতিনিধি ছিল না কমিটিতে। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত পণ্যের বিপুল অংশ খালাস করা হয় মাদার ভেসেল থেকে বহির্নোঙরে। বহির্নোঙরে পণ্য খালাসে নিয়োজিত বাংলাদেশ শিপহ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটরস এসোসিয়েশনের এই কমিটিতে এতদিন সদস্যপদ ছিল না। এবারই প্রথমবারের মত তাদেরকে সদস্য করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, নতুন এই কমিটির প্রথম সভা আগামী ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় বন্দর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। সদস্যদের তা অবহিত করা হয়েছে এবং বন্দর সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের মতামত ও পরামর্শ চেয়ে ইতিমধ্যে পত্র দেয়া হয়েছে। পুনর্গঠিত কমিটির প্রথম সভা হলেও কার্যত এটা উপদেষ্টা কমিটির ত্রয়োদশ সভা। দ্বাদশ সভাটি হয়েছিল ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর। এরপর আর কোন সভা হয়নি। বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবিতে ২০১০ সালে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর। প্রতি ৩ মাস পর পর কমিটির সভা হওয়ার কথা। সেই হিসেবে ৮ বছরে সভা হওয়ার কথা ছিল ৩২টি। অথচ সভা হয়েছে মাত্র ১২টি। এবারের সভায় আগামী কয়েক দশকের সম্ভাব্য চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন সুপারিশ প্রণয়ন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়েছে বৈঠকে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের অ্যাকশন প্ল্যানও তৈরি করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রেরণ করা হবে।
বন্দর উপদেষ্টা কমিটির বিগত বৈঠকগুলো নিয়ে নেতিবাচক মতামতও ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ। অনেকেই বলেছেন, এই কমিটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি কমিটি। চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে এই কমিটির বহু বেশি কাজ করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রায় আট বছর আগে গঠিত এই কমিটি বন্দর ব্যবহারকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। বন্দর ব্যবহারকারী একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বিপুল সদস্য নিয়ে কমিটি হওয়ায় এই কমিটি কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। কমিটিতে এমন অনেকে রয়েছেন যারা সভায় গিয়ে বন্দরের স্বার্থে কথা না বলে ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় উত্থাপন করে সভার মূল্যবান সময় নষ্ট করেন। আবার কোন কোন রাজনৈতিক নেতা ও সাংসদ সেখানে ঝগড়া-ঝাটি করেছেন নিতান্ত ব্যক্তিগত বিষয়কে কেন্দ্র করে। বন্দর ব্যবহারকারী এই নেতা শুধু বন্দরের সাথে সরাসরি সম্পৃক্তদের নিয়ে কমিটি গঠিত হওয়া এবং সভায়ও বন্দরের বিষয়গুলো আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠাতব্য বৈঠকে বন্দর সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় উঠে আসবে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031